যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একটা উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে বিভিন্ন কল্পিত শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। যুক্তরাষ্ট্রের আশপাশে কোনো শক্তিশালী শত্রু নেই, যার সঙ্গে যুদ্ধ করে নিজের শক্তি দেখাবে। তাই নিজের ক্ষমতা, শক্তি ও সামর্থ্য প্রমাণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বারবার আটলান্টিক বা প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়েছে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরাশক্তি হিসেবে উত্থান। কিন্তু এই পরাশক্তির সূর্য এখন অস্তাচলে। ম্রিয়মাণ ভাবমূর্তিকে আবারও শক্তিশালী অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। যুদ্ধের ময়দান থেকে জ্ঞানের জগৎ—সর্বত্রই আধিপত্য প্রমাণের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে অবস্থার খুব বেশি হেরফের হচ্ছে না। একসময় যুক্তরাষ্ট্রের কল্পিত শত্রু ছিল বামপন্থী বিপ্লবীরা। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুর আসনে চলে আসে ইসলামপন্থীরা। উভয়কেই যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে বিভিন্ন দেশে গিয়ে হামলা করে, যুদ্ধ করে, নিরীহ জনসাধারণকে হত্যা করে বৈশ্বিক মোড়লের ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা করেছে। এভাবেই যুক্তরাষ্ট্র একাধিপত্য বিস্তার করেছিল।লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পার্ল হারবারে জাপানের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে কোনো হামলা হয়নি। একমাত্র ইসলামি সংগঠন আল কায়েদার টুইন টাওয়ারে হামলা ব্যতিরেকে। বরং যুক্তরাষ্ট্রই বিভিন্ন দেশে গিয়ে হামলা করেছে এবং যুদ্ধ করেছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সফল হতে পারেনি। বরং সেই শত্রুর হাতেই যুদ্ধের ময়দান ফিরিয়ে দিয়ে লেজ গুটাতে হয়েছে। ভিয়েতনাম থেকে আফগানিস্তানে—একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে পাই।ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশ নেয়নি। তবে এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত পরাজয়ের মুখে আছে। রাশিয়া শক্তি প্রয়োগ করে ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকা দখল করেছে। ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে রাজনীতি করছে রাশিয়া। গ্যাস সংকটে ইউরোপের এখন ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। সার্বিকভাবে জ্বালানি ব্যয় বেড়েছে। ফলে নাগরিকদের আয় থেকে ব্যয় বেড়েছে। জনজীবনে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এসব কারণে ট্রান্স আটলান্টিক জোটের সম্পর্ক এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে।