মো. রুবেল আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি (টাঙ্গাইল)।
গভীর ভালোবাসা মানে সবসময় সুখী দিনের গল্প নয়, বরং কষ্টের সময়েও হাত না ছাড়া। খোকা ও খুকির জীবনের গল্প ঠিক এমনই যেখানে অভাব, বেদনা আর অবিচল সঙ্গ একসাথে পথ চলেছে।
টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌর শহরের সুতি গ্রামের কাঙ্গাল দাস এলাকায় বসবাস করেন এই বৃদ্ধ দম্পতি খোকা (৬০) ও খুকি (৬৫)। ছোটবেলায় খোকা দুনিয়ার রঙ দেখতে পেতেন। কিন্তু মাত্র ছয়-সাত বছর বয়সে এক অজানা রোগে হারিয়ে ফেলেন দৃষ্টিশক্তি। সেই অন্ধত্বই হয়ে ওঠে সারাজীবনের সঙ্গী।
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, খোকাকে অন্ধ জেনেও খুকির মামার অনুরোধে খুকি বিয়ে করেন তাকে। বিয়ের পরদিন থেকেই খুকি স্বামীর হাতে হাত রেখে পুরো গোপালপুর শহর ঘুরে ভিক্ষা করতে শুরু করেন। আজো পরম মায়ার সেই হাত ধরে রেখেছে খুকি। দিনের বেলায় শহর ঘুরে বেড়ানো, সন্ধ্যায় গোপালপুর পেট্রোল পাম্পের সামনে বসে থাকা এটাই তাদের জীবিকার একমাত্র পথ।
বয়সের ভারে খুকির শরীর এখন আর আগের মতো চলতে পারে না। কিছুটা কুঁজো হয়ে হেঁটে স্বামীর হাত ধরে এগিয়ে যান তিনি। তবুও সকাল ১০টায় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে, রাত ৯টার পর ছোট্ট ভাঙা ঘরে ফেরেন দু’জনে। খুকি নিজেই কষ্ট করে রান্না করেন, খোকার মুখে তুলে দেন খাবার।
খোকার আসল নাম কি, সেটা এমনকি খোকা নিজেও জানেন না! মানুষ স্নেহ করে ডাকতে ডাকতে ‘খোকা’ নামটাই স্থায়ী হয়ে গেছে। তাদের প্রতি মায়া করে কিছু মানুষ নিয়মিত ৫/১০ টাকা করে দেন । তাদের দাম্পত্য জীবনেও সুখের সন্তান সঙ্গ ছিল না। এক সন্তান জন্ম নিলেও অকালেই মৃত্যু হয়। সেই ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।
একটি ছোট ছাপরা ঘরে দিন কাটছে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো কষ্টে। গোপালপুর শহরের পথ আর পেট্রোল পাম্পই তাদের জীবনের আয়ের একমাত্র আশ্রয়। আজও তারা অপেক্ষায় থাকেন, কেউ একটু সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেবেন এই ভেবে।
সমাজের বিত্তবান ও মানবিক হৃদয়ের মানুষেরা খোকা-খুকির পাশে দাঁড়ালে, হয়তো বদলে দিতে পারে এই অসহায় দম্পতির শেষ জীবনের গল্প।