ডেস্ক রিপোর্ট দৈনিক শিরোমণিঃ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নগরীর মীরেরডাঙ্গা ও সেনপাড়া এলাকার দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় প্রাণ হারালো নিরপরাধ মীরেরডাঙ্গা এলাকার মৃত আব্দুস সোবহান শেখের পুত্র ওয়েভ জুট মিলের শ্রমিক লিয়ন শেখ (১৮)। গত ২ আগস্ট দুপুর আড়াইটায় সেনপাড়া এলাকা দিয়ে যাওয়ার পথে সংঘবদ্ধ বিপদগামী যুবকের হামলায় আহত লিয়ন শেখ ৫ আগস্ট শুক্রবার রাত ৮টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে। এদিকে লিয়ন হত্যার প্রতিবাদে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারসহ ফাঁসীর দাবীতে খুলনা যশোর মহাসড়কের ফুলবাড়ীগেট এলাকায় রাজপথ অবরোধ করে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ শেষে মীরেরডাঙ্গা ও সেনপাড়া এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে এলাকাবাসী। স্থানিয়রা জানায়, সম্প্রতি মীরেরডাঙ্গা টিবি হাসপাতালের নদীর ঘাটে ভ্যানের সাইড দেওয়াকে কেন্দ্র করে সেনপাড়া এলাকার ঐ ভ্যান সেনপাড়া এলাকার চালক মানিকের সাথে ঘাটের আব্দুর রাজ্জাক নামের এক কাঠ ব্যবসায়ীর কথা কাটাকাটি হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মীরেরডাঙ্গা ও সেনপাড়া এলাকার কতিপয় যুবকের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। গত ২ আগস্ট মীরেরডাঙ্গা এলাকার মৃত সোবহান শেখের পুত্র শিরমণি বাইপাসের ওয়েব জুট মিলের শ্রমিক লিয়ন শেখ দুপুরে খাওয়ার শেষে বাসা থেকে তার আত্মিয়ের সাথে দেখা করতে যাওয়ার পথে সেনপাড়া আনসার ফ্লাওয়ার মিল সংলগ্নে আসলে সেনপাড়া এলাকার কিছু যুবক তার পথরোধ করে বাড়ী কোথায় জানতে চায়। লিয়ন শেখ মীরেরডাঙ্গা বলার সাথে সাথে সংঘবদ্ধ যুবকরা রামদা, লোহার রড সহ দেশীও অস্ত্র দিয়ে গুরুত্বর জক্ষম করে ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানিয়রা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। চারদিন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জালড়ে গত ৫ আগস্ট শুক্রবার রাত ৮টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।এই ঘটনায় নিহতের মামাতো ভাই নুর আলম শেখ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জনকে আসামি করে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন (মামলা নং-৫,তাং-৫/৮/২০২২)। মামলার আসামিরা হলো দৌলতপুর থানাধীন সেনপাড়া আনসার ফ্লাওয়ার মিল রোড এলাকার রাশেদের পুত্র সালাউদ্দিন, সেলিম পাটোয়ারির পুত্র আলাউদ্দিন পাটোয়ারি, শহিদুলের পুত্র মো. মানিক ও মামুন, শিরোমণি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের সামনের আব্দুল মান্নানের পুত্র মো. লিটন, সেনপাড়া আনসার ফ্লাওয়ার মিল রোড এলাকার আক্কাসের পুত্র মো ছাব্বির হোসেন, আফজালের পুত্র মো. শাহিন, মতির পুত্র পঙ্কজ, আকবারের পুত্র আকাশ, মৃত কাদেরের পুত্র স্বাধীন, এরশাদের পুত্র লিমন এবং মোস্তফার পুত্র রনি। নিহত লিয়নের বড় ভাই নয়ন শেখ জানায় মীরেরডাঙ্গা-সেনপাড়া এলাকার দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের বলি হলেন আমার নিরপরাধ ভাই। দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের বিষয়ে আমার ছোট ভাই লিয়ন কিছুই জানতো না শুধুমাত্র সে মিরেরডাঙ্গার সন্তান হওয়ার কারনে তাকে সেনপাড়া এলাকার কিছু যুবকরা দেশীও অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, নিহত লিয়নের মাথায় যে কোপটি দেওয়া হয়েছে সেখানে ৮ ইঞ্চি সেলাই দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তার পিঠেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা দৌলতপুর থানার এসআই লুৎফুল হায়দার বলেন লিয়ন শেখ হত্যার ঘটনায় নিহতের মামাতো ভাই শুভ শেখ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে দৌলতপুর থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলার অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যহত রয়েছে। নিহত লিয়নের মামাতো ভাই মামলার বাদী নুর আলম জানায় লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে ৬ আগস্ট শনিবার মীরেরডাঙ্গা ঈদগাহে নিহতের জানাযা শেষে যোগীপোল কবরস্থানে দাফন করা হয়।এদিকে লিয়ন হত্যার প্রতিবাদে শনিবার বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী জড়িতদের গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি ফাঁসির দাবীতে নিহতের লাশ নিয়ে খুলনা যশোর মহাসড়কের ফুলবাড়ীগেট এলাকায় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বেলা ৩টা ৫০ মিনিট থেকে বিকাল ৪টা ১০ মিনিট পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। পরে খানজাহান আলী থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো. কামাল হোসেন খান এবং এস আই হাসানুর রহমানসহ সঙ্গীয় ফোর্স এসে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেয়। পরে এলাকাবাসী লাশ নিয়ে সেনপাড়া, মীরেরডাঙ্গা, মাইলপোষ্ট, মানিকতলা, ফুলবাড়ীগেট এলাকার গুরুত্বপুর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় এলাকাবাসীর পক্ষে মো. নাসির উদ্দিন, সেলিম রেজা, তারেক মাহমুদ কচি, সোহেল হাওলাদার, ইমরান মীর সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ বক্তৃতা করেন । বক্তারা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্ত আসামীদের গ্রেফতার করা না হলে রাজপথে আন্দোলনে নামার হুশিয়ারী দেন।