রাসেল শেখ,কালিয়া উপজেলা প্রতিনিধি: নড়াইলের কালিয়া পৌরসভার কুলশুর গ্রামে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত জিল্লুর রহমান সরদার হত্যা মামলার এজাহার দায়েরের মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে পাঁচজন এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেফতার করেছে কালিয়া থানা পুলিশ।
শনিবার (১২ জুলাই ২০২৫) রাত সাড়ে ১০টার দিকে কালিয়া থানায় দায়ের হওয়া মামলার পরপরই পুলিশের একাধিক টিম অভিযান চালিয়ে উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের মাধবপাশা ও বাবুপুর গ্রামে পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন—বাবুপুর গ্রামের মৃত কেরামত শেখের ছেলে কামরুল শেখ ও খাইরুল শেখ, জালাল শেখের ছেলে রাতুল শেখ, হাবিবুর শেখের ছেলে সাজিদ শেখ ওরফে সজীব শেখ এবং সাঈদ শেখের ছেলে আকাশ শেখ। তারা সবাই জিল্লুর রহমান হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামিদের মধ্যে রয়েছেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কুলশুর গ্রামের বাসিন্দা জিল্লুর রহমান সরদার (৫৫) এর সঙ্গে পাশের বাবুপুর এলাকার কয়েকজন যুবকের দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক আধিপত্য ও ব্যক্তিগত বিরোধ চলছিল। গত ১১ জুলাই (শুক্রবার) শহীদ এখলাস উদ্দিন আহমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। খেলার সময় হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে, তবে স্থানীয় গণ্যমান্যরা তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন।
পরদিন শনিবার (১২ জুলাই) বিকেলে পূর্ববিরোধ ও অপমানের জের ধরে অভিযুক্তরা লাঠি-সোটা হাতে মাঠে গেলে স্থানীয়রা তাদের প্রতিহত করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ধ্যার দিকে তারা দলবদ্ধ হয়ে কুলশুর গ্রামের মজিবুর রহমান সরদারের বাড়ির সামনে জিল্লুর রহমান সরদারের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্রের কোপে তিনি গুরুতর আহত হন।
স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানে রাতেই জিল্লুর রহমান মারা যান।
নিহতের ছোট ভাই আলী হোসেন সরদার বাদী হয়ে শনিবার রাতেই কালিয়া থানায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর-৩)। মামলার পর পুলিশ রাতেই অভিযানে নামে এবং প্রধান পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “ঘটনার পর আমরা দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে রাতেই পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করেছি। তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং হত্যাকাণ্ডের মোটিভ পরিষ্কারভাবে জানতে আমরা রিমান্ড আবেদন করেছি।”
তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কুলশুর গ্রামসহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।
নড়াইলের পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবীরের নির্দেশনায় জেলার সকল গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, “জেলার প্রতিটি হত্যাকাণ্ড ও অপরাধ তদন্তে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। নিরপরাধ কেউ হয়রানির শিকার হবে না, আবার দোষীরা ছাড় পাবে না।”
এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে, তবে পুলিশের তৎপরতায় বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। নিহতের পরিবার দ্রুত বিচার ও অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে।