রাসেল শেখ,কালিয়া নড়াইল প্রতিনিধি:নড়াইল জেলার নড়াগাতী থানায় যেন প্রতিবছড়ে বর্ষা এলেই শুরু হয় চরমধুপুর গ্রামের মানুষের নিঃস্ব হওয়ার নতুন অধ্যায়। মধুমতী নদীর লাগাতার ভাঙনে গত দুই দশকে ঘরবাড়িওআবাদি জমি এমনকি পূর্বপুরুষের স্মৃতিবিজড়িত ভিটা মাটি ও হারিয়ে ফেলেছে অনেকে। বালুচরে দাঁড়িয়ে থাকা শেষ ঘরটির পাশ দিয়েও যখন নদীর স্রোত গর্জন তোলে, তখন আতঙ্ক নয়, থেকে যায় শুধু অসহায় এর অপেক্ষা—আর কতদিন?
নড়াইল জেলার নড়াগাতী থানার ধীন পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের চরমধুপুর গ্রামে দীর্ঘ সময় ধরে মধুমতী নদীর ভয়াবহ ভাঙনের শিকার। বসতভিটা, ফসলি জমি ও মানুষের শেষ আশ্রয় বারবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর শতাধিক পরিবার এখন নিঃস্ব, হয়ে বাষ গৃহহীন এবং এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দ্বারপ্রান্তে ।
বহু বছর ধরে এই নদীভাঙন চললেও দীর্ঘদিন কার্যকর কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ানি—এমন অভিযোগ করে এলাকাবাসী। তবে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও কারিগরি দপ্তরসমূহের সমন্বিত উদ্যোগে নদী রক্ষা কার্যক্রমে আশার আভাস দেখা যাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে শনিবার (২৮ জুন) সকাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি কারিগরি দল চরমধুপুরে সরেজমিন জরিপ কার্যক্রম শুরু করে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সায়েম রাশেদ দলের নেতৃত্ব দেন। তিনি জানান, “নদীর প্রবাহ, গভীরতা ও ভাঙনের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে জরিপ করা হচ্ছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। এরপর প্রয়োজনীয় প্রকল্প প্রণয়ন শুরু হবে।”
জরিপ চলাকালে উপস্থিত ছিলেন পহরডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মল্লিক মাহমুদুল ইসলাম সংবাদ কর্মীরা । তিনি সংবাদ কর্মীদের বলেন “চরমধুপুরের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অসহায় অবস্থায় দিন পার করছে। এবার সকলে মিলে আমরা চাই, একটি টেকসই ব্যবস্থা গড়ে উঠুক।”
নদীর পাড়ঘেঁষে বসবাসরত পরিবারগুলোর এখনকার চিত্র বর্ণনাতীত। বাড়ির এক পাশ ভেঙে গেছে, অন্য পাশ ফাটল ধরেছে—কোনো ঘরেই নিশ্চিন্তে রাত কাটে না। এলাকাবাসীর কণ্ঠে ভেসে আসে একই আর্তি:
“ভাঙনের শব্দেই জেগে উঠি, দিন যায় পানি মাপতে, ঘুম ভাঙে আতঙ্কে। কত ঘর গেল, কত বছর গেল—এবার যদি কিছু না হয়, তাহলে আর কিছু থাকবে না।”
গ্রামের মানুষ বলছে, “ভিটেমাটির পরে এখন মসজিদ আর স্কুলের দিকেও নদী এগোচ্ছে। শেষ আশ্রয় রক্ষায় যদি এবার প্রকল্প না হয়, তাহলে আর কিছু থাকবে না বাঁচানোর মতো।”
এদিকে জরিপ শুরু হওয়ায় এলাকায় আশার পাশাপাশি উদ্বেগও বিরাজ করছে—আগের মতো শুধু কাগজে-কলমে না থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন পর্যন্ত যেন পৌঁছে। এলাকাবাসী দ্রুত একটি স্থায়ী, টেকসই এবং বাস্তবভিত্তিক নদী প্রতিরোধ প্রকল্প গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
দুই যুগের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবিক লড়াইয়ের শেষে চরমধুপুরের মানুষ চায়—এবার যেন প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তব কিছু দেখতে চাই ।