মুক্তাগাছা উপজেলা যুবলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম মনি’র বড় ছেলে ইফতি সাম বিবেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন।ফেইসবুক স্ট্যাটাসটি মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়। স্ট্যাটাসটি মাত্র ৫৬ মিনিটে ১৫৭ টি লাইক এবং ৬১ টি কমেন্ট করা হয়। প্রতিটি কমেন্টগুলোতে মনি পুত্র ইফতি সাম বিবেককে সান্ত্বনা ও অপেক্ষা করতে বলেন সবাই। ১৬ বৎসর বয়সী ইফতি সাম বিবেক যাকেই পাচ্ছেন তাকেই বলছেন আপনারা আমার বাবাকে এনে দেন প্লীজ। ইফতি ছাড়াও যুবলীগ সভাপতি মনির অপর দুই সন্তানও বাবার জন্য পাগল প্রায়। জানাগেছে, ডাক্তারকে মারধরের অভিযোগে উপজেলা যুবলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম মনিকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করলে বিচারক মনিকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন। তখন থেকে জেল হাজতে রয়েছেন যুবলীগ সভাপতি মনি। যুবলীগ সভাপতি জেল হাজতে থাকাকালীন সময়ে তার পুত্রের এমন আবেগঘন স্ট্যাটাসে নাড়া দিয়েছে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,সুশীল সমাজ,সচেতন নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম কর্মীসহ সকলের বিবেক।সকলের প্রশ্ন মাহবুবুল আলম মনি অপরাধ করেছে কিন্তু তার অসুস্থ্য মায়ের রক্তের সেম্পল বাসা থেকে আনতে পারবেনা বললেই একজন সরকারি ডাক্তারকে মারধর করতে যাবে বলে মনে হয় না। হয়তো তার সাথে মুঠোফোনে খারাপ বা অপমান জনক কোন কথা বলে থাকতে পারেন দায়িত্বরত আবাসিক ডাক্তার। নয়তো এমন আচরণের প্রশ্নই আসেনা। এই বিষয়ে একাধিক ইসলামি চিন্তাবিদদের সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাদের ভাষ্যমতে মাহবুবুল আলম মনি হয়তো অপরাধ করেছেন কিন্তু তার মায়ের চিকিৎসার জন্য। আর যেখানে আল্লাহর পর মার কাছে মাথানত করার বিধান আছে ধর্মে তাই এক দৃষ্টিতে সে কোন অপরাধ করেনি। কারণ মাকে বাঁচানোর জন্য মা পাগল একটা ছেলে এটা করতেই পারে। তবে বাসায় গিয়ে রক্তের সেম্পল আনতে পারবে না বলার পর এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার কথা নয়। এর পিছনে অন্য কোন কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন তারা। তবে মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনিয়ম ও দুর্ণীতি এবং দালাল দৌরাত্মের কথাও কিন্তু কারো অজানা নয়। এসবের একাধিক অভিযোগ পাওয়া যায় কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। আর  ডাক্তারের সাথে মোবাইলে কথা বলার পর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মাহবুবুল আলম মনি হাসপাতালে ছুটে গিয়ে তাকে মারধর করবেন এটা কারো কাছেই বিশ্বাস যোগ্য নয়। যদি কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে ভাল ভাবে বুঝিয়ে বলতেন তাহলে হয়তো এমন ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ছিলনা বলে মনে করেন সচেতন মহল। সচেতন মহল থেকে একটি প্রশ্ন করা হয় এই প্রতিবেদককে তাহল – দল ক্ষমতায় থাকার পরও যদি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি তার মায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে মারামারি করতে হয় সেখানে সাধারণ মানুষ কতটা সেবা পাচ্ছে বলে মনে করেন আপনারা? এখন সময় এসেছে বিষয়গুলো ভেবে দেখার। বর্তমানে দালাল দৌরাত্মে ভরে গেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে হয়রানি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যার ফলশ্রুতিতে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে প্রাইভেট ক্লিনিক। যদি সরকারি হাসপাতাল গুলোতে হয়রানি মুক্তভাবে মানুষ সেবা পেত তাহলে প্রাইভেট ক্লিনিক গুলোতে মানুষ যাবে কেন? নির্ভরযোগ্যসূত্রের তথ্যমতে মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারগণের সাথে ক্লিনিক মালিকদের সাথে রয়েছে কমিশন ভিত্তিক সম্পর্ক যার ফলে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা থেকে। আর তাই বেশির ভাগ সেবাপ্রার্থীরা দালালদের ক্ষপ্পরে পরে প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর দিকে ঝুকছেন। মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দালাল দৌরাত্ম এবং অকেজো মেশিনারিজ নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে একাধিক সংবাদও পরিবেশন হয়েছে অতিতে। মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের দায়িত্বহীনতা এবং সৌহার্দপূর্ণ আচরণ যতদিন পর্যন্ত ফিরে না আসবে ততদিন এমন ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতেই থাকবে বলে মতামত ব্যাক্ত করেন বিশিষ্টজনেরা। তবে এত আলোচনা সমালোচনা যাকে নিয়ে সেই মুক্তাগাছা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মাহবুবুল আলম মনি’র পুত্রের আবেগঘন স্ট্যাটাসটি দেখে সবারই হৃদয়ে রক্তখড়ন হয়েছে। পাঠকদের জন্য ইফতি সাম বিবেকের ফেইসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো।ইফতি সাম বিবেকের ফেইসবুক পোস্টটি হুবহু তুলর ধরা হলো-

baba ..tmi sara ki amr eid katbe??ashbe na ki tmi baba🙃?bissas koro tmi fireh esho eibar kissu e chaibo na eid a..lokkhi sera hoye thkbo..kin2 tmi taw fire asho baba ..tmkh sara je thkte parvo na 🙃baba …love u🙂।

এই স্ট্যাটাসের পর সবার একই প্রশ্ন আজকের এই ছেলেটি বড় হয়ে বাবা বা মায়ের চিকিৎসকদের গাফিলতির জন্য সঠিক চিকিৎসা করাতে না পারলে কি  এমন ঘটনা ঘটবেনা? যেখানে ময়মনসিংহের একজন ডাক্তার ছেলের মা বাবা করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর সে ডাক্তারি পেশা ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। অসুস্থ্য মায়ের চিকিৎসার জন্য মা পাগল মাহবুবুল আলম মনিদের এমন ঘটনা ঘটানোটা কি স্বাভাবিক নয়? এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য প্রয়োজন সরকারি হাসপাতাল গুলোতে হয়রানি মুক্ত সেবা দেওয়া, কর্তব্যরত ডাক্তারদের আয়েশী ভাব পরিহার করা এবং কমিশন ভিত্তিক ব্যবসা বন্ধসহ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা। সচেতন মহলের পক্ষ থেকে মাননীয় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ মহোদয় এর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানানো হয় যে, আপনিও একজন মা আর মা যদি সঠিক চিকিৎসা না পায় তাহলে সন্তানের কি অবস্থা হতে পারে এবং চিকিৎসা সেবার বেহাল দশার কথা গুলো বিবেচনা পূর্বক মাহবুবুল আলম মনির সন্তানদের ও তার অসুস্থ্য মায়ের কথা বিবেচনা করে তাকে মুক্তি দিতে যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহণ করবেন।

Facebook Comments