1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : বরিশাল ব্যুরো প্রধান : বরিশাল ব্যুরো প্রধান
  3. [email protected] : cmlbru :
  4. [email protected] : চট্রগ্রাম ব্যুরো প্রধান : চট্রগ্রাম ব্যুরো প্রধান
  5. [email protected] : ঢাকা ব্যুরো প্রধান : ঢাকা ব্যুরো প্রধান
  6. [email protected] : স্টাফ রিপোর্টারঃ : স্টাফ রিপোর্টারঃ
  7. [email protected] : ফরিদপুর ব্যুরো প্রধান : ফরিদপুর ব্যুরো প্রধান
  8. [email protected] : সম্রাট শাহ খুলনা ব্যুরো প্রধান : সম্রাট শাহ খুলনা ব্যুরো প্রধান
  9. [email protected] : ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান : ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান
  10. [email protected] : আমজাদ হোসেন রাজশাহী ব্যুরো প্রধান : রাজশাহী ব্যুরো প্রধান
  11. [email protected] : রংপুর ব্যুরো প্রধান : রংপুর ব্যুরো প্রধান
  12. [email protected] : রুবেল আহমেদ : রুবেল আহমেদ
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৫ অপরাহ্ন

ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ ধনিক শ্রেণির স্বার্থ দেখে

রিপোর্টার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৪ মার্চ, ২০২১

শিরোমণি ডেস্ক : ( সারাক্ষণ থেকে সংগৃহীত) বাংলাদেশে বাম মতাদর্শের রাজনৈতিক দলগুলোর কোনোটির বয়সই ৪০-এর কম নয়। দু-একটি দলের রাজনীতির ইতিহাস ৬০ থেকে ৬৫ বছরের বেশি। প্রতিষ্ঠার এত বছর পরও এ ধরনের রাজনৈতিক দলগুলো এই মুহূর্তে মূলধারার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না। বলার মতো জনসম্পৃক্ততাও অর্জন করতে পারেনি এই দলগুলো। প্রতিষ্ঠার এত বছর পর তাই এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে আগ্রহী মহলে। রাজনীতিসচেতন সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাবেক রাজনৈতিক কর্মীসহ অনেকেই মনে করছেন, সময়ের সঙ্গে সঠিক ইস্যু নিয়ে এসব দল জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। সে কারণেই তারা জনসম্পৃক্ত হতে পারছে না। তবে এমন অভিযোগ মানতে নারাজ সিপিবি, বাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও ন্যাপের জ্যেষ্ঠ নেতারা।

জনসম্পৃক্ত হতে না পারার অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ‘সারাক্ষণ’কে বলেন, ‘সিপিবির মতো রাজনৈতিক দল জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেনি- এমন মতের সঙ্গে আমি একমত না। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বাম দলগুলোই জনগণের সঙ্গে আছে, জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট সব আন্দোলনেই সক্রিয় থাকে। অবশ্য ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের কথা বলব না। কারণ, তারা তো ক্ষমতার সঙ্গে থাকা ধনিক শ্রেণির স্বার্থ দেখে। আমরা জনসম্পৃক্ত নই, এটা কিসের ভিত্তিতে বলবেন? দেশে ভোটের অধিকার নেই, তাই আমরা ভোট করলে সেখানে এর প্রতিফলন দেখা যায় না। আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে সব ধরনের নাগরিক ইস্যু নিয়ে রাজপথে থাকি, অথচ এগুলো পত্রিকায় আসে না, প্রচার হয় না।

পত্রপত্রিকাগুলো আগ্রহ দেখায় শেখ হাসিনা কি শাড়ি পরেছে কিংবা খালেদা জিয়া সকালে কী দিয়ে নাশতা করেছে- এসব বিষয় নিয়ে। প্রচারে না এলে কীভাবে বুঝবেন আমাদের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা আছে কি না। গণমাধ্যমই চায় আলোচনাটা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুক।’

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন একই প্রশ্নের জবাবে ‘সারাক্ষণ’কে বলেন, ‘অল্প কথা ও সময়ে এ ধরনের প্রশ্নের জবাব দেয়া যায় না। পরবর্তী সময়ে লিখিতভাবে মতামত জানানো যেতে পারে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ ‘সারাক্ষণ’কে বলেন, ‘এই দলগুলো অনেক পুরোনো এবং গণমানুষের কথা বলা দল। এটা ঠিক, আমাদের বহুল সমর্থন নেই। তবে আমরা যে জনসম্পৃক্ত হতে পারছি না, সেটা একেবারেই ঠিক নয়। আমরা যেসব জায়গায় যাচ্ছি, আমাদের রাজনীতি নিয়ে, সেখানে সবাই আমাদের গ্রহণ করছে। যেসব জায়গায় যেতে পারছি না, সেসব জায়গায় আমাদের গ্রহণ করার কোনো অবকাশ নেই। আমাদের কর্মী সংকটসহ আনুষঙ্গিক নানা প্রতিবন্ধকতা থাকার কারণে সব জায়গায় যেতে পারছি না। তাই বলে জনগণ আমাদের গ্রহণ করছে না- এমন না। আমরা এবং জনগণ সব সময় একসঙ্গে ছিলাম, আছি। এটার প্রমাণ পাওয়া গেছে এই করোনার সময়ে। এ সময় সারা দেশে মানবতার বাজার, অদম্য পাঠশালা, কমিউনিটি কিচেনসহ নানা উদ্যোগ নিয়ে আমরা জনগণের পাশে ছিলাম এবং জনগণ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিল। এসব খবর পত্রপত্রিকা বা গণমাধ্যমে সেভাবে আসেনি, তাই মানুষ জানে না। এ ছাড়া বন্যা ও শীতে সব সময় মানুষের পাশে থেকে ও ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের মতো বিষয়গুলোতে আমাদের দেশব্যাপী কঠোর অবস্থান ও আন্দোলন ছিল। এরপরও বলব, এসব উদ্যোগ যে মাত্রায় আমাদের নেয়া দরকার ছিল, সে মাত্রায় পারিনি। তবে আমরা আশাবাদী, অদূর ভবিষ্যতে এসবের ঘাটতি পূরণ হবে।’

বামপন্থী রাজনীতিতে সমর্থন কমার পেছনে বিশ্ব রাজনৈতিক প্রভাবের কথা উল্লেখ করে রাজনীতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মেজবা কামাল ‘সারাক্ষণ’কে বলেন, ‘বিশ্বজুড়েই এখন খোলাবাজার অর্থনীতির প্রভাব চলছে। তার একটা প্রভাব বাংলাদেশেও আছে। এদিকে বামপন্থী রাজনীতির প্রতি সমর্থন বিশ্বজুড়েই কমেছে। যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও এই ঘরানার রাজনীতিতে সমর্থন কমবে, এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শ্রেণি-সংঘাত ক্রমাগত বাড়ছে, কিন্তু সেটা এখনো যথেষ্ট তীব্র হয়নি। ফলে বামপন্থী রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা এ দেশের মানুষ এখনো সেভাবে অনুভব করছে না। এ ছাড়া আমাদের দেশের বামপন্থী রাজনীতি এখন অনেকটা অফিসকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। এ কারণে তারা সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার সংগ্রামের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত হতেও পারছে না। শ্রেণি-সংগ্রামের রাজনীতি করে যদি তাদের জীবন ও জীবিকার সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত না হওয়া যায়, তাহলে তো জনসম্পৃক্ত হতে পারার প্রশ্নই ওঠে না। আর একটি বিষয় হচ্ছে, আজকাল রাজনীতিতে রাষ্ট্রীয় শক্তির মদদে অনিয়ন্ত্রিতভাবে এত পরিমাণ অর্থ ও পেশিশক্তির প্রভাব বিস্তার হয়েছে যে সেখানে এই দলগুলো টিকতে পারছে না।’

বামপন্থী রাজনীতির ইতিহাস ঘেঁটে ঢাবির এই অধ্যাপক আরো বলেন, ‘ভারতীয় উপমহাদেশের বামপন্থী রাজনীতির ইতিহাস থেকে জানা যায়, বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর কয়েকটি চরমপন্থা অবলম্বন করায় এই রাজনীতি থেকে সাধারণ মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারাবাহিকতায় যদি তারা অব্যাহতভাবে থাকত, তাহলে এই বিচ্ছিন্নতা তৈরি হতো না। চরমপন্থা অবলম্বন করতে গিয়ে তারা গণসংগঠন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং এ কারণে জনসম্পৃক্ততা হারায়। শ্রেণিশত্রুর রক্তে হাত রাঙানোর রাজনীতি, ভুল রাজনীতি। শ্রেণিশত্রুদের খতম করে পরাস্ত করা যাবে না, রাজনীতি দিয়েই পরাস্ত করতে হবে। শ্রেণিশত্রুকে খতম করা কোনো রাজনীতি হতে পারে না। শুধু এ দেশের জনগণ কেন, পৃথিবীর কোনো দেশের জনগণই খতমের রাজনীতি পছন্দ করে না। মোটকথা দেশের বামপন্থী রাজনীতির একটা অংশ যে একসময় চরমপন্থা অবলম্বন করতে গিয়ে গণসংগঠন ত্যাগের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, সেই ক্ষতিটা এখনো তারা পুষিয়ে নিতে পারেনি। এ ছাড়া বামপন্থী দলগুলোর আরেকটা ধারা আছে, যারা ক্ষমতাসীনদের নৈতিকভাবে সমর্থন করতে গিয়ে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য হারিয়েছে। যেমন, আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িক চেতনার সঙ্গে দেশের পরিচিত কয়েকটি বামপন্থী দল একাত্মতা পোষণ করেছে, এটা খুব ভালো কথা। কিন্তু এই চেতনার বাইরে আওয়ামী লীগ যে অন্যায়, অবিচার বা ছায়া ফ্যাসিবাদ কায়েম করছে, সেগুলোকে তারা ওভার লুক করে যাচ্ছে, চুপচাপ থাকছে। এতে করে তারা ক্ষমতার অংশ হয়ে নিজেদের রাজনীতির বিরুদ্ধাচরণ করছে। মোটকথা, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি থেকে যদি বামপন্থী দলগুলো নিজেদের চরিত্র আলাদা করতে না পারে, তাহলে জনগণ তাদের কী দেখে নতুন শক্তি হিসেবে মূল্যায়ন করবে? এ ক্ষেত্রে বড় দুই দলের সঙ্গে এই ধারার বামপন্থীদের পার্থক্য জনগণের কাছে দৃশ্যমান না হওয়ার কারণেও তারা জনসম্পৃক্ততা তৈরি করতে পারছে না।’

রাজনীতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ‘সারাক্ষণ’কে বলেন, ‘কেন বামধারার এই দলগুলো জনসম্পৃক্ত হতে পারছে না, সেটা নিয়ে একটা বড় গবেষণা হতে পারে। তাৎক্ষণিকভাবে তো এত কথা বলা সম্ভব না। তবে বেশ কিছু কারণের মধ্যে একটা হতে পারে, এই রাজনৈতিক দলগুলোর ভাষা সাধারণের কাছে এখনো বোধগম্য হয়ে উঠছে না। তাদের এজেন্ডা বা কার্যক্রম জনগণকে সেভাবে আকৃষ্ট করতে না পারাও আরেকটা কারণ হতে পারে। কোনো না কোনোভাবে জনগণের মধ্যে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় সফল হতে না পারায় এত বছর পরেও জনসম্পৃক্ত হতে পারেনি দলগুলো।’

এ বিষয়ে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা ‘সারাক্ষণ’কে বলেন, ‘এই দলগুলো শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতি মানুষের স্বার্থে ক্ষমতা দখলের শক্তি হিসেবে নিজেদের নিয়ে যেতে পারেনি এবং নেয়ওনি। তারা সব সময়ই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লেজুড়বৃত্তি করেছে। তারা কখনোই এই শ্রেণির মানুষের রজনৈতিক শক্তি হিসেবে ক্ষমতা দখলের ডাক দেয়নি। ব্রিটিশ আমলে এই উপমহাদেশীয় অঞ্চলের কমিউনিস্টদের স্লোগান ছিল, ‘রুটিকে লিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি, ভোটকে লিয়ে কংগ্রেস’। মানে হলো, কমিউনিস্ট পার্টি লড়াই করবে রুটির জন্য আর ক্ষমতার জন্য হলো কংগ্রেস। আর বাংলাদেশে আশির দশকে সিপিবির একটা স্লোগান ছিল, ‘ভাত, কাপড়, জমি-কাজ, কমিউনিস্ট পার্টির এক আওয়াজ’। এটার মানে হলো, কমিউনিস্ট পার্টি ভাত, কাপড়, কাজ আর জমি চায়। ক্ষমতা চায় না। এটা তো সব মানুষই জানে, সরকার ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যদি কারো হাতে না থাকে, তাহলে সে কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না, জনগণের জন্য কিছু করতে পারবে না। ব্যক্তিগতভাবে দান-খয়রাত করা যায়, কিন্তু সমগ্র সমাজের পরিবর্তন করতে গেলে বামপন্থীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করতে হবে। এই দলগুলো শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতি মানুষের কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের মতো রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে হাজির হতে না পারায় তারা জনসম্পৃক্ততা অর্জন করতে পারেনি। এই দলগুলো বুর্জোয়া ও আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তি করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধিতার নামে। তারা জনগণের মূল দুশমন শোষক-লুটেরা ধনিকশ্রেণির বিরুদ্ধে এবং ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়নি এবং রাজনৈতিকভাবে কোনো সংগ্রাম গড়ে তোলেনি। এই দলগুলো জনগণের সামনে নিজেদের স্বতন্ত্র অবস্থান তুলে ধরতে পারেনি। যেটা জামায়াতের মতো একটা জনধিক্কৃত দলও পেরেছিল বা পেরেছে। অথচ সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ ও ন্যাপের মতো পুরোনো দলগুলো সেটা তৈরি করতে পারেনি। স্বতন্ত্র অবস্থান না থাকলে এসব দল মানুষ গ্রহণ করবে না, এটাই স্বাভাবিক।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাসদ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট শহীদুল্লাহ শহীদ বলেন, ‘ব্রিটিশ, পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বামপন্থী দলগুলো একনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। তারা শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতি মানুষের আন্দোলনেও থাকে। কিন্তু তাদের এই আন্দোলন কখনোই সফল হয় না। এর কারণ হচ্ছে তাদের আন্দোলনের মূল ভিত্তি হচ্ছে কার্ল মার্কস, লেনিন ও মাও সে-তুং। এই মতাদর্শগুলো প্রধানত বিদেশের। এই বিদেশি মতাদর্শ ও চিন্তা এবং সমাজ বিশ্লেষণের প্রক্রিয়া দিয়ে ভারতবর্ষের সমাজ ও ধর্মকেন্দ্রিক সমাজকে বোঝা যায় না। এ দলগুলো জনসম্পৃক্ত হতে না পারার এটি একটি কারণ। অন্য কারণ হচ্ছে, তারা মানুষকে লোভ, লালসা, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও আনন্দ-উল্লাস এগুলো থেকে মুক্ত থাকতে বলে। অথচ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে লোভ করা। মানুষ সম্পদ অর্জন করে আনন্দ-ফুর্তি করতে চায়। এসবের বিরুদ্ধে যারা মানুষকে উৎসাহিত করতে চায়, তাদের সাধারণ মানুষ পছন্দ করে না এবং তাদের ধারেকাছেই যেতে চায় না। এ কারণেই বিশ্ব, ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশেও বাসদ, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি বা ন্যাপ ও সিপিবির মতো দলগুলো জনসমর্থন হারিয়ে এখন দুর্বল অবস্থায় আছে। অদূর ভবিষ্যতেও এই দলগুলোর কোনো উন্নতি হবে বলে আমি মনে করি না। মূলত বামপন্থী দলগুলোর ত্যাগ-তিতিক্ষা থাকার পরেও রাজনীতিতে তাদের কাজের কোনো ইতিবাচক ফল নেই। সমাজ বিনির্মাণে তাদের কাজগুলো মূল্যহীন। এ কারণেই তাদের ব্যর্থতা আছে এবং তারা কর্মী বা সমর্থক পায় না।’

এ ধরনের বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর তাত্ত্বিক জটিলতা ও নেতৃত্ব পর্যায়ে ব্যক্তিবিরোধের কথা উল্লেখ করে একসময়ের সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও লেখক খোকন দাস ‘সারাক্ষণ’কে বলেন, ‘বাংলাদেশের বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে দুটি ধারা রয়েছে। এর মধ্যে সিপিবি এক ধারার রাজনীতি করে এবং জাসদ থেকে আসা বাসদসহ আরো কিছু ছোট ছোট পার্টি আছে, যারা আরেক ধারার রাজনীতি করে। এই দলগুলো যে তত্ত্বের ভিত্তিতে রাজনীতি করে সেটা হলো মার্কসবাদ, লেনিনবাদ। এর ভিত্তিতেই সোভিয়েত ইউনিয়নে বিপ্লব করেছিলেন ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন। সেখানে তিনি রুশ জনগণ ও সমাজকে ধারণ করেছিলেন। আর এ দেশের নেতারা তা অন্ধভাবে অনুসরণ করেছেন। এ দেশের মানুষের ইতিহাস, ঐতিহ্য, মন-মেজাজ, চাহিদা ও সংকটকে উইজডমের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়নি। আমাদের দেশে সৃজনশীলভাবে তত্ত্ব প্রয়োগের এই জায়গায় চরম ঘাটতি আছে। এসব কারণে অনেক পরিশ্রম করেও তারা মানুষের মন জয় করতে পারছে না। এত কিছুর পরেও সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা না পেয়ে কর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয় এবং তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। অপরদিকে নিজেদের মধ্যেও তত্ত্বের সৃজনশীল প্রয়োগ না করতে পারায় নানা সংকটের সমাধান বই থেকে উদ্ধৃত করার কারণে নেতৃত্ব পর্যায়ে ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। যা একপর্যায়ে ব্যক্তিত্বের সংঘাতে রূপ নেয়। যার ফলে বারবার দলগুলো ভেঙে যায়, ভেঙে ভেঙে শক্তি ক্ষয় হয়ে যায়। ব্যর্থতার এগুলোও আরো একটা কারণ। তা ছাড়া, উল্টো দিক থেকে দেখলেও বর্তমানে পুঁজিবাদের প্রভাবে ভোগবাদে নিমজ্জিত থাকা মানুষের চিন্তাভাবনায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এসব পরিবর্তনের কারণেও মানুষ সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি আগ্রহ দেখায় না। তাই বামপন্থী রাজনীতি এ দেশে জায়গা করে নিতে পারছে না। তবু আমি মনে করি, তত্ত্বের সঠিক ও সৃজনশীল প্রয়োগ করতে পারলে সারা বিশ্বের মতো এ দেশেও এ ধরনের রাজনীতির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। এ পথেই যেতে হবে মানুষকে।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি এ বিষয়ে ‘সারাক্ষণ’কে বলেন, ‘এই দলগুলোর জনসম্পৃক্ততার সংকট কী? সেটা আমার পক্ষে অল্প কথায় সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব না। আমি যেভাবে বুঝি সেটা হলো, রাজনৈতিক সাফল্যের জন্য যেকোনো ঐতিহাসিক কালে বা বাস্তবতায় ওই সময়ের জনগণের মূল যে রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা, সেটাকে ধারণ করতে হয়। সেটাকে ধারণ করতে পারলে রাজনৈতিক সাফল্য সৃষ্টি হয়। কিন্তু তারা এটা করতে সফল হচ্ছেন না। তাই জনসম্পৃক্ত হতে পারছেন না।’

Facebook Comments
৮ views

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২২ দৈনিক শিরোমনি