চারঘাট প্রতিনিধি:মোঃ মোহাইমেনউল (স্বপন):রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার প্রায় বেশির ভাগ ইটভাটা অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে। এসব ভাটার গর্ভে চলে যাচ্ছে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি। ইট তৈরির মৌসুমকে ঘিরে ভাটাগুলোতে মজুদ করা হয়েছে বিশাল আকারের মাটির স্তুপ আর এই মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে আবাদি জমি নষ্ট করে। চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম কালাবিপাড়া, কালুহাটি, চককৃষ্ণপুর, জোতকার্তিক এবং নিমপাড়া এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে ইটভাটা এতে আম, লিচু, ভুট্টা, মসুর সহ ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে নানা ধরনের মৌসুমী সবজি ও ফসল।
ধুমধামে চলছে ইট পোড়ানোর উৎসব। উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে যে ভাটা গুলো গড়ে উঠছে প্রায় সবগুলো আবাদি জমি ও লোকালয় পরিবেশে। একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিবছর ভাটাগুলোতে প্রায় ২০০-৩০০ একর জমির মাটির উপরি ভাগ পোড়ানো হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত ১৯৯২ সালের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে ‘কৃষি-জমিতে ইটভাটা নির্মাণ দন্ডীয় অপরাধ’। কিন্তু চারঘাটে যে ইট ভাটা গুলো গড়ে উঠেছে তারা এই আইন মানছে না। কৃষি জমির আশ-পাশে গড়ে তুলছে ইট ভাটা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার এসব ভাটায় ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ফসলি জমিতে তৈরী করা হচ্ছে অবৈধ্য পুকুর আর এই মাটি মজুদ করা হচ্ছে ইট ভাটাগুলোতে। ভাটা মালিকরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কেউই আইন মানছেন না। স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও মানুষ।
তবে জমির মালিকরা জানান, প্রতিবিঘা (৩৩ শতক) জমি আবাদের জন্য লিজ দিলে বছরে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু মাটি বেচলে পাওয়া যায় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। ভাটাসংলগ্ন এলাকার কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যেভাবে ইট পোড়ানো হচ্ছে, তাতে স্বাস্থ্যহানি এবং পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে এই সকল অবৈধ্য ইটভাটায় বন্ধের দাবি জানাই।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, জমির ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি মাটিতে বেশি পুষ্টি থাকে। যা ফসল উৎপাদনে খুবই সহায়ক। কৃষকদের অস্বচ্ছলতার সুযোগে ভাটা মালিকরা জমির মালিকদের উদ্বুদ্ধ করে ইট তৈরির জন্য কৃষি জমির উপরি ভাগের মাটি কিনছেন। ভাটায় প্রতিবছর মাটির উপরি ভাগ ব্যবহার করায় জমির পুষ্টিগুণ ও উৎপাদন শক্তি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। আর কৃষকরা জমিতে সারের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এভাবে মাটির উপরি ভাগ তুলে নেওয়া অব্যাহত থাকলে ভতিষ্যতে জমিগুলো পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অত্র এলাকায় লোক ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। ইট ভাটায় মাটি ও ইট বহনের জন্য ভারী যান বাহন চলাচল করার কারনে রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যাচ্ছে এবং ধুলাবালী উড়ে এলাকার বায়ু দূষন হয়ে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এই ইট ভাটা বন্ধের জন্য অভিযোগ যানানো হয়েছে- রাজশাহী জেলা প্রশাসক, চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে। এলাকা বাসী দ্রুত এই ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগীতা ও এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে।