এনামুল মবিন(সবুজ) প্রতিনিধি দিনাজপুর: বাংলাদেশের ‘শস্য ভাণ্ডার’ হিসেবে খ্যাত উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর। এবার বোরো ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। এদিক সেদিক মিলে যতোদুর চোখ যায় সেদিকেই দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। এই স্বপ্নকে ঘরে তুলতে শুরু করেছেন চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষকরা। অনেকটা ব্যস্ত সময় পার করছেন ধান কাটা-মাড়াইয়ে। বাড়ির পুরুষেরা খেতে বোরো ধান কাটা মাড়াইয়ের পর সেই ধান রোদে শুকোতে তুলতে দিন যাচ্ছে কিষানিদের। অনেক ব্যস্ত এখন তাঁরা সবাই। সেই সকাল বেলা ঘুম থেকে জেগে কিছু মুখে দিয়েই কামলা(দিনমজুর) নিয়ে কৃষকেরা কাস্তে হাতে খেতে যাচ্ছেন। এরপর কেউ মোবাইলে গান লাগিয়ে আবার কেউ গল্প করে কাটছেন ধান।দুপুরে বাড়ির বউ বা ছেলে পাত্র ভরে মাঠে নিয়ে যাচ্ছেন খাবার। গাছের ছায়ায় বসে জিরিয়ে কৃষকেরা মুখে তুলছেন সে খাবার। সামান্য বিরতির পর আবারও ধান কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন কৃষক। ধান কাটা শেষে ঘারে বা ভ্যানে করে ধান নিয়ে এসে মাড়াই করছেন তারা।যেন স্বপ্নকে ঘরে তুলতে একটুও ক্লান্তি নেই কৃষকদের। এদিকে কাল বৈশাখী ঝড় আসার আগেই মাঠের বোরো ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন কৃষকরা। একারণে কিছুটা শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। তাই হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে দ্রুত ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ করা হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ধানের ফলন আসছে ৩৫ থেকে ৪০ মণ। বাজারে নতুন ধানের দামও ভালো রয়েছে। প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। এতে খুশি কৃষকরা। উপজেলার ১২নং আলোকডিহি গ্রামের কৃষক মোঃ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ৭ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছি। জমির ধান পাকায় রবিবার এলাকার ধান কাটার শ্রমিক নিয়ে ধান কাটা শুরু করেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ক্ষেতের ধান ভালো হয়েছে। এ জন্য আমি অনেক খুশি। উপজেলার ৩নং ফতেজংপুর গ্রামের কৃষক মোঃ বাদল বলেন,ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে কালবৈশাখির যে গর্জন, তাতে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। ঝড় আসলে ভিষণ চিন্তা হয় এই বুঝি ধান গুলো ঝরে বা শুয়ে গেল। সর্বপরি আল্লাহ ভরসা। যা কপালে আছে তাই হবে আর কি। ৫ বিঘা জমির ধান পেকেছে, এই ধান কাটতে পেরে আমি খুবই খুশি। বাজারে ধানের দামও ভালো রয়েছে। প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৭০০/৮০০ টাকা দরে। এক বিঘা জমিতে ধান হয়েছে ৪০ মণ। তবে শ্রমিকের মজুরি বেশি। এক বিঘা জমি কাটা-মাড়াই করতে শ্রমিকদের দিতে হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে উপজেলায় বোরো আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ৪৯০ হেক্টর। ধানের বর্তমান অবস্থা খুব ভালো। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৬৩ টন এবং চালের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫ হাজার ৮৪২ মেট্রিক টন। উপজেলায় চালের বার্ষিক চাহিদা ৫৯ হাজার ১১৫ মেট্রিকটন। গতবছর আমনে চালের উৎপাদন ৯১ হাজার ১১৮ মেট্রিকটন। আউশে চালের উৎপাদন ২ হাজার ৩৬ মেট্রিক টন। তিনি আরও বলেন, এ বছর বোরো হাইব্রিড এসএল৮ প্রণোদনার ৬ হাজার ১৪০ জন কৃষক এবং উচ্চফলনশীল জাতের প্রণোদনার ২ হাজার ৩৬০ জন। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া মাঠে গিয়ে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষকরা বাম্পার ফলন পাবেন বলে আশা করছি।