
আহসান হাবীব লায়েক,জকিগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধিঃঅজ্ঞান পার্টির এই চক্রটি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের ছদ্মবেশে গাড়িতে উঠে থাকে। সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। অজ্ঞান পার্টি? অজ্ঞান, মলম পার্টি মানে যারা পথচারীদের নানা উপায়ে অজ্ঞান করে আর্থিক জিনিসপত্র ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এসব শ্রেণির মানুষগুলো ছিনতাই, চুরি কিংবা প্রতারণাচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে এবং তারা অজ্ঞান করার ওষুধ মানুষের ওপর প্রয়োগ করে মানুষকে সর্বহারা করে থাকে।
 
তারা বিভিন্নভাবে মানুষকে হয়রানির মুখে ফেলে, অজ্ঞান করে নিয়ে নেয় সর্বস্ব। চক্রটি বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও মার্কেটগুলোর সামনে অবস্থান নিয়ে থাকে। কখনো ক্রেতার বেশে, কখনো যাত্রীবেশে। প্রথমে তারা তাদের টার্গেট নির্ধারণ করে এবং এদের কারও সঙ্গে ক্ষণিকের সম্পর্ক তৈরি করে জুস, কাউকে চকোলেটসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য, আবার কাউকে সুগন্ধি শুঁকিয়ে অজ্ঞান করে সবকিছু নিয়ে নেয়।
গত (২৪ মার্চ) বৃহস্পতিবার রাতে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ নজরুল ইসলাম (৩৮)-কে মামুন এন্টারপ্রাইজ গাড়িতে অজ্ঞান করে নগদ ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকাসহ ১৩ হাজার টাকা মূল্যের একটি স্যামসাং মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জানা যায়, সে জকিগঞ্জ উপজেলার ৭নং বারঠাকুরী ইউনিয়নের অন্তর্গত বারঠাকুরী গ্রামের আব্দুল মন্নান মিয়ার ছেলে নজরুল ইসলাম।
এবিষয়ে ভূক্তভোগী নজরুল ইসলাম গত (২৯ মার্চ) মঙ্গলবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তিনি ব্যবসা করার লক্ষ্যে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার ৯নং মানিকপুর ইউনিয়নের কালিগঞ্জ বাজারে “নজরুল এন্টারপ্রাইজ” নামে একটি ট্রেশনারী দোকানের সকল ধরণের ডেকোরেশনের কাজ সম্পন্ন করে দোকানের আসবাবপত্র, মালামাল ক্রয় করার উদ্দেশ্যে (২৪ মার্চ) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে নিজ বাড়ী হতে ঢাকা শহরে যাওয়ার জন্য সিলেট শহরে গিয়ে মামুন এন্টারপ্রাইজ নামক কাউন্টার থেকে বাসগাড়ীর একটি টিকেট কিনেন। রাত্র অনুমান ০১.৩০ ঘটিকা অথ্যাৎ (২৫ মার্চ) শুক্রবার মামুন এন্টারপ্রাইজ, রেজিঃ নং-ঢাকা মেট্রো-জ-১৫-৮৭৩৭ নাম্বারের বাসগাড়ী যোগে ঢাকা শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ভূক্তভোগী নজরুল ইসলামসহ সকল যাত্রীরা বাসগাড়ীতে উঠার পর গাড়ীর চালক জ্বালানো লাইট বন্ধ করেন। সাথে সাথে অজ্ঞাতনামা ছিনতাইকারী চেতনা নাশক ঔষধ প্রয়োগ করে তার নিকট হতে ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকাসহ ১৩ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে তার নতুন দোকানের মালামাল খরিদ উপলক্ষ্যে সিলেট শহর হতে ঢাকা শহরে যাওয়ার জন্য সিলেটের বাস টার্মিনালে মামুন এন্টারপ্রাইজ নামক বাস কাউন্টারে গেলে কাউন্টারের দায়িত্যরত ম্যানেজার ঢাকা মেট্রো-জ-১৫-৮৭৩৭ নাম্বার বাসের F1 সীট বুকিং দেন। ঐ সময় অজ্ঞাতনামা ছিনতাইকারী সদস্যের এক ব্যাক্তি আমার পাশের F2 সীট বুকিং করে। কাউন্টারের সামন হতে বাসগাড়ীটি ছাড়ার সাথে সাথে চালক গাড়ীর লাইটগুলো বন্ধ করে দেয়। লাইট বন্ধ করার পরপর ই গাড়ীর হেল্পার আমার পাশে এসে আমি কি কাজে ঢাকা শহরে যাইতেছি জিজ্ঞাসা করে। ঐ সময় আমার পাশের F2 সীটে থাকা অজ্ঞাতনামা ছিনতাইকারী ব্যাক্তি আমার মুখ স্পর্শ করে অচেতনা নাশক ঔষধযুক্ত একটি সাদা রুমাল/টিস্যু গড়িয়ে নেয় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। পরদিন (২৬ মার্চ) শনিবার দুপুর ১২ টার দিকে মুগ্ধা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমার জ্ঞান আসে। জানিতে পারি, খবর পেয়ে আমার আত্মীয় স্বজন ও স্থানীরা আমাকে সায়েদাবাদ এলাকার একটি ড্রেইনের পাশ হতে উঠাইয়া উক্ত মেডিকেলে ভর্তি করেন।
ভূক্তভোগী আরো জানায়, ঢাকা শহরে রওয়ানা দেওয়ার সময় তার পড়নের পায়জামার ডান ও বাম পকেটে থাকা ২,০০,০০০/- টাকা করে মোট ৪,০০,০০০/- ঢাকা এবং হ্যান্ডব্যাগে থাকা ৭৪,০০০/- টাকাসহ মানিব্যাগে ১,২০০/- টাকা এবং Samsung A10s. মূল্য ১৩,০০০/- টাকা, সংযুক্ত সিম নং-০১৭২৬৩৮৪৭৮১ ছিল, যাহা অজ্ঞাতনামা ছিনতাইকারী সদস্য নিয়া নেয়। নজরুল ইসলাম, মামুন এন্টারপ্রাইজ বাসগাড়ীর চালক ও হেল্পার তাকে ফুটপাতের ড্রেইনের উপর ফেলে গিয়েছে বিধায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জড়িতদেরকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসার অনুরোধ জানান।
সিলেট মেট্রোপলিটন দক্ষিণ সুরমা পুলিশ ফাড়িঁর ইনচার্জ (উপ-পুলিশ পরিদর্শক) মোঃ সোহেল রানা অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জকিগঞ্জ উপজেলার বারঠাকুরী গ্রামের নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যাক্তি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষ্য ছিনতাইয়ের ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলমান রয়েছে।
                     
                    
                    
                    
	
				
		no views