মোঃ জাহিদুল ইসলাম, বরিশাল জেলা প্রতিনিধি:
বাকেরগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকায় নির্মিত বহুতলা ভবন, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি অফিসসহ মার্কেট গুলো অগ্নি নিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে পৌর শহরের সদর রোড সংলগ্ন গলি গুলোতে আবাসিক ভবন, মার্কেট, ব্যাংক বীমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।এছাড়াও গত ৫ বছরে গ্রামীণ ব্যাংক সড়কের দুই পাশে, টিএনটি সড়কের দুই পাশে ও আগাবাকের লেনে নির্মিত আবাসিক ও বহুতল বাণিজ্যিক প্রায় ৫০টি ভবন অগ্নি নিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ। পৌরসভার নিয়ম অনুযায়ী, একটি ভবনের চারপাশে ৩ মিটার পরিমাণ খালি জায়গা থাকতে হবে। একটি ভবন থেকে আরেকটি ভবনের দূরত্ব ৪ থেকে ৫ মিটার থাকতে হবে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ।
উঁচু কোনো ভবন নির্মাণ করতে হলে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের অনাপত্তিপত্র নিতে হয়। এক্ষেত্রে অনাপত্তিপত্রের জন্য ১৮টি শর্ত দেওয়া হয়। ভবন নির্মান শেষে এসব শর্ত পূরণ করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করে ছাড়পত্র দিয়ে থাকে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। তবে ফায়ার সার্ভিসের এ নীতিমালার কোনোটাই মানছেন না বাকেরগঞ্জের উঁচু ভবন নির্মাণ করা মালিকরা। আর এভাবেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই একের পর এক নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন।
উপজেলার পৌর শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গড়ে ওঠা আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন গুলোর অধিকাংশতে নেই রিজার্ভ পানির ব্যবস্থা। এসব স্থাপনা নির্মাণে যেমন মানা হয়নি ইমারত নির্মাণ বিধিমালা তেমনি নেই অগ্নি নিরাপত্তার ব্যবস্থা।
এসব ভবন নির্মার্ণে বিল্ডিং ও ফায়ার কোড মানার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তার ধারে কাছে কেউ যায়নি। প্রতিটি ভবন নির্মার্ণে ‘অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপন আইন ২০০৩’ মানার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা উপেক্ষা করছে না অধিকাংশ ভবন মালিকেরা। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
বাকেরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মো. আব্দুল কুদ্দুস জানান, পৌর শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রায় ছোট-বড় ৫ শত ভবন রয়েছে। ৮০ ভাগ ভবনে অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা নেই। ভবনের নকশার মধ্যে পাঁচ তলা থেকে সাত তলা পর্যন্ত আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ভবনের জন্য দুইটি সিঁড়ি, দুইটি লিফট ও বাণিজ্যিক ভবনের জন্য দুইটি সিঁড়ি ও দুইটি লিফট এবং দশ তলার অধিক হলে আরো বেশি পরিমাণ সিঁড়ি ও লিফট থাকার কথা থাকলেও ভবন মালিকরা কেউ এসবের তোয়াক্কা করেন না।
এ বিষয়ে তারা কোনো ব্যাবস্থা নিচ্ছেন না কেন? জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়টা জেলা অফিস দেখার দায়িত্ব তারাই ভালো বলতে পারবেন। তিনি বরিশাল জেলা অফিসের সহকারি প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
নির্মিত এসব বহুতল ভবন তৈরির সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাব ছিল। বহুতল ভবন নির্মাণে পৌরসভা, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের যে তদারকি থাকার দরকার রয়েছে, তা যথাযথভাবে তারা পালন করছে না। আর এ কারণে বহুতল ভবনের মালিকরা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই ভবন নির্মাণ করছেন। এমন দাবি সুশীল সমাজের।
বরিশাল জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারি পরিচালক মো. বেলাল উদ্দিন জানান, বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ভবনে দুই লাখ লিটার ধারণক্ষমতার ও ভবনের সর্বশেষ ধাপে ৮০ হাজার লিটার ধারণক্ষমতার জলাধার থাকতে হবে। প্রতিটি ফ্লোরে লুজ রিল (পানির পাইপ) ও সংযোগ পয়েন্ট থাকতে হবে। আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে পানি তোলার জন্য পাম্প ও প্রশিক্ষিত জনবল থাকতে হবে।
পৌরসভার নিয়ম অনুযায়ী একটি ভবনের চারপাশে ৩ মিটার পরিমাণ জায়গা খালি রাখতে হবে। অথচ বাকেরগঞ্জের ভবন মালিকেরা এসব বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষকে কোন অবহিত করছেন না। তবে এই আইন যারা মানছেন না তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণসহ যেসব মার্কেট, আবাসিক ভবন, বহুতল ভবনসহ প্রতিষ্ঠান মালিকরা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই ভবন নির্মাণ করছেন তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৪ জুন রাত ১২টায় বাকেরগঞ্জ বন্দরে আগুন লেগে দুইটি রেস্টুরেন্ট, ৩টি স্বর্ণের দোকান, ৩টি ওষুধের দোকান, ডেকোরেটর ও টিভি-ফ্রিজের দোকানসহ প্রায় ২০টি দোকানঘর ও ১৫-২০টি বসত ঘর পুড়ে যায়।
এছাড়াও ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর বাকেরগঞ্জ বন্দরে লঞ্চ ঘাট সংলগ্ন ১৬টি দোকান আগুনে পুড়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
তবে বাকেরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসে যে (মই) রয়েছে তাও আবার ম্যানুয়াল, হাইড্রোলিক নয়। ম্যানুয়াল মই দিয়ে সর্বোচ্চ দুইতলা পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা সম্ভব। ২০১৮ সালে তৃতীয় শ্রেণির ফায়ার সার্ভিস স্থাপিত হয়। বর্তমানে ১০ জন লোকবল রয়েছে। পানিবাহী দুটি বড় গাড়ি রয়েছে। দুটি টু হুইলার মটরসাইকেল রয়েছে তাও অকেজো।
বাকেরগঞ্জ প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় দিন দিন বহুতল বিশিষ্ট ভবন নির্মিত হচ্ছে। পাশাপাশি শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্ট হওয়ায় অতি দ্রুত বাকেরগঞ্জে একটি প্রথম শ্রেণির ফায়ার সার্ভিস স্টেশন প্রয়োজন। এটা না হলে অগ্নি দুর্ঘটনা হলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
গ্রামীন ব্যাংক সড়কের ৭ তলা সিকদার ভবনের কেয়ারটেকার শাহ আলম জানান, ভবনের মালিক মাহবুব সিকদার আমেরিকা থাকেন। বর্তমানে আমি বাড়ির দায়িত্বে আছি। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফায়ার সার্ভিস থেকে এখনো লাইসেন্স করেনি ভবন মালিক। তবে লাইসেন্স করা হবে।
পাশাপাশি ভবন মালিক হারুন সিকদার জানান, মাহবুব সিকদার আমার চাচাতো ভাই। তাই ভবনের মাঝখানে ফাকা না রেখেই ভবন নির্মান করা হয়েছে।
সিকদার ভবনের ভাড়াটিয়ারা জানান, ভবন গুলো নতুন নির্মাণ করেছে। ভবন মালিক কেনো অগ্নি নির্বাপন ব্যাবস্থা রাখেনি আমরা ঠিক বলতে পারবো না।
এ বিষয় বাকেরগঞ্জ পৌরসভার প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, গ্রামীন ব্যাংক সড়কের পাশে ৭ তলা যে ভবন নির্মাণ হয়েছে। সেটার জন্য আলাদা আলাদা নকশায় তিনটি ভবন নির্মান করার কথা। তবে জমির মলিকরা হয়তো জমি স্বল্পতা ও নির্মাণ খরচ সাশ্রয়ের জন্য ভবন তিনটি একই সঙ্গে নির্মাণ করেছে।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]