দৈনিক শিরোমণি ডেস্ক রির্পোট: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাঁতশিল্প অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি শিল্প। প্রচুর তাঁতী তাদের শ্রম দিয়ে বছরে ৭০ কোটি মিটার কাপড় তৈরি করেন, তাদের এই পরিশ্রমের দ্বারা দেশের শতকরা ৪০ ভাগ বস্ত্রের কাপড়ের যোগান হয়। তাঁত শিল্প থেকে বছরে প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা মূল্য সংযোজন কর পেয়ে থাকে বাংলাদেশ।বাংলাদেশের বৃহত্তম কুটির শিল্প হস্তচালিত তাঁতশিল্প, আর এর স্বর্গ হলো পাবনা এবং সিরাজগঞ্জ। বহুকাল ধরে এটি কৃষির পরেই বহুল প্রচলিত এক শিল্প, যা অনেক মানুষের, বিশেষ করে নারীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। বর্তমানে তাঁতশিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত আছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ।
পাবনা উপজেলা সদর থেকে অদূরেই মানুষ কৃষি ও অন্যান্য শিল্পের সমন্বয়ে একটি চমৎকার পরিশ্রমী জনগোষ্ঠী গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে বসবাসকারীদের পূর্বপুরুষেরা এখানে লুঙ্গি, গামছা, শাড়ি আর চাদরসহ রকমারী বস্ত্র বানিয়ে আসছেন, যা যুগে যুগে উত্তরসূরিদের হাত ধরে আজও চলে আসছে সেই পুরাতন সৌন্দর্য ও শিল্পমান ধরে রেখে। এ ইউনিয়নে বর্তমানে প্রায় ২২০০ তাঁত আছে এবং পুরুষ-মহিলা মিলে প্রায় ১২,০০০ মানুষ এ শিল্পের সাথে জড়িত। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখানের উৎপাদিত পণ্য বিদেশেও রপ্তানী হয়ে আসছে বহুকাল ধরে। সর্বত্র সমাদৃত এখানকার তাঁত এর মান।বহু যুগ ধরে পাবনা জেলা তাঁতশিল্পের জন্য পরিচিত। পাবনা সুজানগরে এক সময় তৈরী হতো মসলিন শাড়ি। উপনেবেশিক শাসনামলে এই শাড়ি লন্ডনের বাজারে রপ্তানী হতো। বর্তমানে মসলিন কাপড় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। তবে তাঁতের অন্যান্য শাড়ি-কাপড়, লুঙ্গি, চাঁদর, গামছা এখনো তৈরি হয়। পাবনার বেশীর ভাগ তাঁতের কাজ হয় এখন পাওয়ারলুমে। হস্ত চালিত তাঁত প্রায় হারিয়েই যাচ্ছে বলা যায়। পাবনা জেলা শহরের নিকটবর্তী দোগাছী, শহরের মুজাহিদ ক্লাব (শিবরামপুর), ভাঁড়ারা, জালালপুর, নতুনপাড়া, গঙ্গারামপুর, বলরামপুর, মালঞ্চি, কুলুনিয়া, ছোন্দহ, ছেচানিয়া, জোড়গাছা, সোনতলা, কাশিনাথপুর, বেড়া উপজেলার কৈটলা, পাটগাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় কোন মতে টিকে আছে হস্তচালিত তাঁত।
কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় বাঙ্গালীর প্রিয় পোশাক কি, অধিকাংশই এক নিঃশ্বাসে বলে দেবেন লুঙ্গীর নাম। আরাম, সাশ্রয় আর ঐতিহ্য মিলিয়ে ল ুঙ্গীর প্রতি ভালোবাসা অটুট রয়ে গিয়েছে আজও। দেশের অন্যতম লুঙ্গির উৎপাদনকারী অঞ্চল পাবনা লুঙ্গি এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে রপ্তানী হচ্ছে বিদেশে। বিদেশে অনেক বাংলাদেশি কাজ করছেন। তাদের চাহিদা পূরণ করতেই মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহারাইন, দুবাই, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কানাডা, ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ ২৫ দেশে লুঙ্গি রপ্তানী হচ্ছে। এসব দেশে বসবাসকারী বাঙালিরাই মূলত এ লুঙ্গির ক্রেতা। ইন্দোনেশিয়াসহ অনেক দেশের লোকজন শখ করে এ দেশের লুঙ্গি কিনেন। এই রপ্তানী থেকে বছরে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা আয় হচ্ছে।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]