আলামিন, নবীনগর উপজেলা প্রতিনিধি(কুমিল্লা বিভাগ):ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার চড়িলাম গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আপন ভাতিজার হাতে চাচার কব্জি বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো নৃশংস ঘটনার তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও অভিযুক্ত আসামিদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এতে ভুক্তভোগী পরিবার যেমন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, তেমনি মামলার অগ্রগতি না হওয়ায় তারা আইনের প্রতি আস্থাও হারাতে বসেছে। ঘটনার শিকার রফিকুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে।
গত (২৬ জুন) এই হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর আহত রফিকুল ইসলামের ছেলে মোঃ আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে (২৭ জুন) নবীনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান অভিযুক্ত মোঃ বায়জিদ ইসলাম এবং অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত থাকলেও এখনো পর্যন্ত তারা অধরা।
বাদী মোঃ আরিফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আসামিরা গ্রেপ্তার না হয়ে বরং মামলা করায় উল্টো তাদের পরিবারকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “আমার বাবাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিতভাবে হামলা করা হয়েছে। এখন আমরা মামলা করেছি বলে আসামিরা আমাদের হুমকি দিচ্ছে। আমরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। পুলিশ গড়িমসি করায় বাধ্য হয়ে গত ১৩ই জুলাই-২০২৫ইং তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নির্বাহী মাজিস্ট্রেট আদালতে আরেকটি ফৌজদারি কার্যবিধি নং১০৭/১১৪/১১৭(গ) এর ধারায় মামলা করেছি যার মামলা নাম্বার p১২১৩। এখন প্রশাসনের কাছে একটাই দাবি—আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক।”
হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত রফিকুল ইসলামের ভাগ্নে গোলাম রব্বানী জানান, তার মামা বাড়িতে ঢুকতেই এক নারী তার চোখে মরিচের গুঁড়া ছুড়ে মারে এবং মামাতো ভাই বায়জিদ দা দিয়ে তার হাতে কোপ দেয়। তিনি বলেন, “আমি দেখেছি তার হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, তিনি মাটিতে ছটফট করছিলেন, রক্ত ঝরছিল প্রচণ্ড গতিতে।”
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ইকবাল হোসেন বলেন, “রফিকুল ভাইয়ের আমার বাড়িতে দাওয়াত ছিল। জমি থেকে ফিরেই তিনি বাড়িতে ঢুকছিলেন, তখনই হামলা হয়। আমি পাশের দোকান থেকে ছুটে এসে দেখি তার হাত নেই। আমি হাত ধরে ধরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।”
আহতের স্ত্রী অশ্রুসিক্ত চোখে সেই ভয়াল মুহূর্তের বর্ণনা দেন। তিনি জানান, ঘটনার সময় তিনি রান্নাঘরে কাজ শেষ করছিলেন এবং তার স্বামী ফসলের মাঠ থেকে কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন।
তিনি বলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার ভাসুর শফিকুল ইসলাম ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় সজোরে কোপ দেন। ঠিক তখনই শফিকুলের স্ত্রী মুক্তা ইসলাম ছুটে এসে তার (আহতের স্ত্রীর) হাতের চারটি আঙুল কেটে ফেলে। পাশবিকতার এখানেই শেষ নয়, মুক্তা হাঁড়ি থেকে মরিচের গুঁড়া তুলে নিয়ে তার মুখে ছুড়ে মারে। মুহূর্তের মধ্যে তাদেরই ভাতিজা এসে এক কোপে তার স্বামীর হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
গুরুতর আহত রফিকুল ইসলাম নিজের বেদনাময় অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। আল্লাহর রহমতে আমি বেঁচে গেছি। কিন্তু এখন আমার হাত নেই, আমি স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতে পারব না। আমি কেবল ন্যায়বিচার চাই।”
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হামলার পরও আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং বাদী ও তার পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এতে করে চড়িলাম গ্রামে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীনূর ইসলাম বলেন, “আমরা মামলাটি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে তৎপরতা অব্যাহত আছে ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকেও অবহিত করা হয়েছে।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চড়িলাম গ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।