লিটন মুন্ডা, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ চা বাগানের চা জনগোষ্ঠীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব "কারাম পূজা,,। বংশ পরম্পরায় যুগ-যুগ ধরে প্রতি-বছরের মতো এবারো প্রায় ৩ হাজার মানুষের সমাগমে জাঁকজমকপূর্ণভাবে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের নালুয়া চা বাগানের চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীরা এ কারাম উৎসব পালন করেছেন।
শুক্রবার রাতে কারাম পুজার ব্রত রাখেন মহিলা যুবতী কিশোরীরা ব্রত শেষ রাত ১২ টায় পারণ করার পর সারারাত কারামের ঐতিহাসিক ঝুমুর নাচ চলতে থাকে পর দিন এ উৎসব নালুয়া ফুটবল মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজন করা হয় এবং ২ নং আহম্মাদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান জাকির হোসেন পলাশ অনুষ্ঠানের শুভ উদ্ভোধন করেন । সকাল ১০ টায় চা জনগোষ্টীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আলোচনা সভা ও মুরব্বীদের সন্মাননা প্রদান করা হয়।
দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয় বিকাল ৪ টায় দেবরাম মুন্ডা ও আকাশ মুন্ডার সঞ্চালনায় দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন নালুয়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক - ইফতেখার এনাম।
কারাম উৎসব উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকবর হোসেন জিতু । বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন - চুনারুঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান - মোঃ আব্দুল কাদির লস্কর, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান - আবু তাহের, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি - নৃপেন পাল, চুনারুঘাট প্রেস ক্লাবের সভাপতি - সাংবাদিক জামাল হোসেন লিটন, বাগান সহকারী ব্যবস্থাপক - শাব্বির আহমেদ, সাইমুম, মহানগর হাসপাতাল সিলেটের পরিচালক- মোঃ মাসুদ আহমেদ,আহম্মদাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ - মো. আলাউদ্দিন, লিটন জমাদার প্রমূখ।
নালুয়া চা বাগানের ফুটবল মাঠে ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসবের আয়োজনে জেলা ছাড়াও সিলেট, মৌলভীবাজার জেলার ওঁরাও, মুন্ডা, ঝড়া, খাড়িয়া, বাড়াইক, কর্মকার, ভূমিজ, তাঁতী, পাল, ও সাঁওতাল সম্প্রদায়সহ ১২টি নৃত্যের দল অংশ নেয়। কারাম উৎসবে তারা তাদের নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরেন। উৎসব শেষে আদিবাসী সাংস্কৃতিক দলগুলোকে পুরস্কৃত করা হয়।
মূলত কারাম একটি গাছের নাম। বিভিন্ন উপজাতি-গোষ্ঠীর মানুষের কাছে এটি একটি পবিত্র গাছ। মঙ্গলেরও প্রতীক। পূজার সময় আদিবাসী দুই ভাই ধর্মা ও কর্মার জীবনী তুলে ধরা হয়। তারা বিশ্বাস করেন ধর্ম পালন করায় ধর্মা রক্ষা পান সব বিপদের হাত থেকে। আর কর্মা ধর্ম পালন না করায় তার ক্ষতি হয়।
কারামডাল অস্থায়ী মণ্ডপে রেখে পূজা-অর্চনা আর নাচ-গান ও কিচ্ছা বলার মধ্য দিয়ে প্রতিবছর কারাম উৎসব পালিত হয়। এ সময় পুরো এলাকার উপজাতি সম্প্রদায়সহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
পূজা শেষে পরদিন কারাম ডাল উঠিয়ে গ্রামের তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের নারী-পুরুষ নেচে গেয়ে গ্রামের বাড়ি-বাড়ি ঘুরে পুকুরের জলে বিসর্জন দেন। উপজাতিরা এ কারাম উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন। এ উৎসবে উপজাতি সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক দল তাদের নাচ-গান পরিবেশন করেন।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]