আজ ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস'
সালাউদ্দিন আহমেদ মিলন
সকল শিক্ষকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
যাঁরা পরকালে চলে গেছেন, তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
====================
কিছু কথা....
মানুষ হিসেবে জন্ম গ্রহন করলেই মানুষ হওয়া যায় না। তাকে নানাবিধ শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ হতে হয়। একজন মানুষকে পরিপুর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে একজন শিক্ষকের ভুমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
একজন মানবশিশু পিতামাতার হাত ধরেই পৃথিবীতে এসে আলোর মুখ দেখে। পিতামাতাই শিশুটির জন্মদাতা, তবে বিচিত্র্যময় পৃথিবী সম্পর্কে বুঝতে শেখে শিক্ষকদের কাছে। শিক্ষকই জ্ঞাণ শূন্য মানব শিশুকে ভিন্ন চোখে বিশ্বকে দেখতে শেখায়, প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে।
মানুষকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে বিশ্বব্যাপী যে সংখ্যক স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে তার এক ভাগও জেলখানা নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন তার পুত্রের শিক্ষকের কাছে লেখা পত্রে বলেছিলেন, ‘আমার পুত্রকে জ্ঞানার্জনের জন্য আপনার কাছে পাঠালাম, তাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন- এটাই আপনার কাছে আমার বিশেষ দাবি।’
পৃথিবীতে পিতামাতার সঙ্গে মানুষের যেমন নাড়ির সম্পর্ক, তেমনি শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক আত্মার। শিক্ষকরা আমাদের আত্মবোধ গড়ে দেন। তাঁরাই আমাদের আত্মার আত্মীয়, আপনজন। জ্ঞানহীন মানুষ যদি পশুর সমান হয়ে থাকে, সেই মানুষের মনে জ্ঞানের আলো জ্বেলে প্রকৃত মানুষ করে তোলে একজন আদর্শবান শিক্ষক।
পিতামাতা-সন্তানের সম্পর্কের মতো শিক্ষক - শিক্ষার্থীর সম্পর্ক এক অবিচ্ছেদ্য সুন্দর সম্পর্ক। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক হওয়া উচিত অভিভাবকতুল্য ও বন্ধুসুলভ। শিক্ষকরা প্রথমে হবেন অভিভাবক, তারপর বন্ধু। তবে সেই বন্ধুত্বের মধ্যে সীমারেখা থাকা উচিত। আসলে ছাত্র-শিক্ষকের মাঝে সম্পর্ক হওয়া উচিত ‘বন্ধুর মতো ’; তবে ‘বন্ধু নয়। ফলে অভিভাবক ও বন্ধুত্বের একটি মিশ্রণ থাকবে শিক্ষকের আচরণের মাঝে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হতে হবে পাত্র ও পানির মতো। পাত্র ছাড়া যেমন পানি সংরক্ষণ সম্ভব নয়, তেমনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সুসম্পর্ক ছাড়া জ্ঞানার্জন ও অসম্ভব। একজন শিক্ষকই শিক্ষার্থীর জ্ঞানার্জনের পেছনে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জোগায়, স্বপ্নও দেখায়।
একজন মানুষের জীবনে পিতামাতার পরই শিক্ষকের অবস্থান। তবুও একজন শিক্ষক আমাদের কাছে পিতামাতার সমতুল্য। ছাত্র-শিক্ষকের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক হাজার বছর ধরে চলে আসছে। শুধু শিক্ষা কিংবা জ্ঞানার্জন নয়, একজন ছাত্রের বিপদ-আপদ-দুর্দিনে ছায়ার মতো পাশে দাঁড়ান একজন শিক্ষক।
আবার সেই শিক্ষার্থী জীবনে যত বড়ই হোক- গুরুজনকে ভক্তিভরে সম্মান করেন, শ্রদ্ধা করেন। আমাদের সংস্কৃতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে এক আশ্চর্য সেতুবন্ধন। যে বন্ধন কেবল পারস্পরিক স্নেহ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর বিশ্বাসের ওপর গড়ে ওঠে। শিক্ষার্থী -শিক্ষকের এ সম্পর্ক বড় শক্ত গাঁথুনির সম্পর্ক।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিছু পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে আজ শিক্ষকদের অবস্থা খুবই নাজেহাল। বিশেষ করে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি শিক্ষকেরা জীবন যাপন করছে অতি কষ্টে।
বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমার দাবি একটাই, বেসরকারি শিক্ষকদের বাঁচার মতো বাঁচতে দিন, তাঁদের বাঁচার পরিবেশ করে দিন।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]