নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ আর কত অপক্ষোর প্রহর গুনতে হবে আজির উদ্দিনের পরিবারের। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত যখন তার সহযোদ্ধারা বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিসহ সম্মান পেলেও তিনি রয়েছেন বঞ্চিত।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও যখন একের পর এক মুক্তিযোদ্ধারা যখন নতুনভাবে তাদের প্রাপ্য সম্মান ও স্বীকৃতি পেয়েছেন। ঠিক তখনও তিনি কোন কারণে বঞ্চিত তা জানেন না আজির উদ্দিনের পরিবার।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যতটুকু প্রমাণ থাকলে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া যায় তার সম্পূর্ণটাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর পর কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। চোখের সামনে দিয়ে সম্প্রতি নিয়ামতপুর উপজেলার আরো ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন অথচ ১৯৭১ সালে রনাঙ্গনে পাকিস্তানী হানাদার, রাজাকার, আলবদর বাহিনীদের মুর্তিমান আতংক আজির উদ্দিন বার বার হচ্ছেন বঞ্চিত। ফলে আজির উদ্দিনের স্ত্রীর প্রশ্ন আমার স্বামী কি প্রাপ্য সম্মানটুকু পাব না।
তার পুরো নাম মোঃ আজির উদ্দিন। তিনি নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুড়িহারী গ্রামের মৃত মহির উদ্দিনের সন্তান। সবাই জানেন, চিনেন কিন্তু মিলেনি তার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ও প্রাপ্য সম্মান টুকুও। এ নিয়ে সবার মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায়, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সুত্র জানা যায় উপজেলা ভিত্তিক মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নিয়ামতপুর সদর ইউনিয়নে ১৬ নং ক্রমিকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আজির উদ্দিনের নাম রয়েছে। যাহার জাতীয় তালিকা নং ৫৪, ভোটার সূচক নং ৬৪-৬৯-৫২-০০১। এছাড়া বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির তালিকায় একই সূচকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আজির উদ্দিনের নাম রয়েছে। যুদ্ধ শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে অস্ত্র জমা দেওয়ারও রশিদ রয়েছে। সর্বশেষ অনলাইনেও আবেদন করেও কোন লাভ হয়নি।
মুক্তিযোদ্ধা আজির উদ্দিন তার জীবনদশায় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায় নাই। বর্তমানে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। ভাংগা মাটির ছোট্ট একটি ঘরে বসবাস করেন আজির উদ্দিনের স্ত্রী।
আজির উদ্দিনের ৬ সন্তান। তিন ছেলে এবং তিন মেয়ে। বড় ছেলে আকতার ও মেঝ ছেলে আইজুল দিন মজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে, ছোট ছেলে তাইজুল নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লেবার হিসাবে কাজ করে। দুই মেয়ে বিয়ে হলেও ছোট মেয়েটিকে এখনও বিয়ে দিতে পারেন নাই অর্থের অভাবে।
আজির উদ্দিন ২০১৩ সালে মৃুত্যবরণ করলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়ায় সরকারী সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে পরিবারটি আজ অনাহারে অর্দাহারে জীবন কাটাচ্ছে। শুধু মাত্র জাতীয় দিবসগুলোতে সংবর্ধনা নিয়েই তাদের শান্তনা।
কথা হয় ছোট ছেলে তাইজুল ইসলামের সাথে তিনি বলেন, আমার বাবা নিয়াতমপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবিএম জামশেদ আলীর সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর বর্ডার এলাকায় যুদ্ধ করেছে। সাথে ভাবিচার মুক্তিযোদ্ধা পটল সরেন, আমইল গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা করিম ও তালপুকুরিয়ার আব্দুল বারীও ছিলেন। তারা প্রত্যেকেই মারা গেছেন।
আজির উদ্দিনের ছেলে তাইজুল ইসলাম ক্ষোভের সাথে জানান, ১৯৭১সালে দেশ মাতৃকার টানে ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষন শোনার পর নানান বাঁধা পায়ে ঠেলে মৃত্যু নিশ্চিত যেনেও আমার বাবা যুদ্ধে চলে যায়। আমার বাবার যৌবনের সবটুকু দিয়ে যুদ্ধ করেছে স্বাধীনতার জন্য। তখন জীবনের মায়া ছিল আমার বাবার কাছে নগন্য আজ সেই আমার বাবা সবার কাছে নগণ্য হয়ে পড়েছে।
আজির উদ্দিনের স্ত্রী জয়গন কান্নাবিজড়িত কন্ঠে বলেন, আমি খেয়ে না খেয়ে একটি ভাংগা ছোট্ট ঘরে বাস করছি। ঘরটি যে কোন মূহুর্তে ভেংগে পড়তে পারে। টাকার অভাবে ভাংগা ঘর মেরামত করতে পারছি না। তাই সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন আমার স্বামী দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে। আমার আমার আমার সন্তানদেরকে একটু ভালোভাবে বাঁচার সুযোগ করে দিন।