সারোয়ার হোসেন,রাজশাহীঃ রাজশাহীর তানোরের মুন্ডুমালা পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র সাইদুর রহমান বিজয়ী হয়েও চেয়ার হারানোর আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তথ্য গোপনের অভিযোগে মেয়র সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। মামলায় সাইদুর রহমানকে প্রধান করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (ইসি), রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ (ডিসি) ১২ জনকে প্রতিপক্ষ করা হয়েছে।
রাজশাহীর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে মামলাটি দায়েে করেন তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত পরাজিত প্রার্থী আমির হোসেন আমিন। মঙ্গলবার সকালে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি। গত রোববার দায়ের করা মামলায় প্রধান প্রতিপক্ষ করা হয়েছে নির্বাচিত মেয়র সাইদুর রহমানকে। এছাড়া আরও প্রতিপক্ষ করা হয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও আপিল কর্তৃপক্ষ, তানোর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, মুন্ডুমালা পৌরসভা নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশনার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ফিরোজ কবির।
মামলার আরজিতে বলা হয়, এক নম্বর প্রতিপক্ষ সাইদুর রহমান মুন্ডুমালা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়রপদে নির্বাচন করার অযোগ্য ছিলেন মর্মে ঘোষণাসহ তার প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন করা হয়। সেই সঙ্গে মামলার বাদীকে মেয়র হিসেবে ঘোষণাসহ তার নামে গেজেট প্রকাশ ও শপথবাক্য পাঠ করার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশনা প্রদানের জন্য প্রার্থনা জানানো হয়েছে। সম্প্রতি ৩০ জানুয়ারি এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মামলার বাদী আমির হোসেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচিত মেয়র সাইদুর রহমান বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। দুই নম্বর প্রতিপক্ষ বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ছিলেন।
তবে সাইদুর বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অনড় থাকায় গত ২১ জানুয়ারি সকালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মুন্ডুমালা পৌর শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম হাবিবুল্লাহ স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাইদুরকে বহিস্কার করে জেলা কমিটির কাছে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে জেলা কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্রে প্রেরণ করেন।
এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাইদুর রহমান জগ প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৫৯ ভোট। আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আমির হোসেন পেয়েছেন ৫ হাজার ৩৯৮ ভোট। বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী পেয়েছেন ৩ হাজার ৬৮১ ভোট। ৬১ ভোটের ব্যবধানে সাইদুর রহমান মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। মামলার আরজিতে আরও বলা হয়, মেয়র সাইদুর রহমানের স্ত্রী মোসা. সহিদা বেগম ওরফে মোসা. সাহিদা বেগম প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ও সরবরাহকারী। তার প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স সাগর ট্রেডার্স। তিনি মুন্ডুমালা পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্সপ্রাপ্ত তালিকাভুক্ত ঠিকাদার ও সরবরাহকারী।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভায় মালামাল সরবরাহ ও ঠিকাদারি কাজ করছেন। তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের লাইসেন্সপ্রাপ্ত। পৌরসভার একটি টেন্ডার কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। নির্বাচিত মেয়র সাইদুর রহমানের স্ত্রীর সঙ্গে মুন্ডুমালা পৌরসভার আর্থিক স্বার্থ থাকায় আইনের বিধান অনুযায়ী সাইদুর রহমান পৌরসভার মেয়রপদে নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ছিলেন। হলফনামায় এই তথ্য গোপন করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি অবহিত হওয়ার পরও তার প্রার্থিতা বাতিল করেননি।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাইদুর রহমানের নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এবিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র সাইদুর রহমান বলেন, তিনি মামলার বিষয়টি শোনেননি। তিনি কোনো তথ্য গোপনও করেননি। তার নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আইনের কোনো ফাঁক নেই বলে তিনি দাবি করেন। আমির হোসেনের আইনজীবী এজাজুল হক মানু বলেন, আইনের বিধান অনুযায়ী প্রার্থী বা তার পরিবারের কোনো সদস্য পৌরসভার সঙ্গে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন কোনো কাজে যুক্ত থাকতে পারবেন না। থাকলে সেই প্রার্থী নির্বাচনে অযোগ্য বলে গণ্য হবেন। সেই হিসেব মতে সাইদুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিলযোগ্য।