শাহ আলম, গোয়াইনঘাট (সিলেট) প্রতিনিধিঃ
গোয়াইনঘাটে ভুঁয়া উত্তরাধিকারী সনদ দিয়ে ভুমি আত্মসাত ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করার প্রতিবাদে এলাকাবাসীর সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা ২টায় গোয়াইনঘাট উপজেলার ৫নং পুর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নের পাঁচসেউতি বাজর ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন এলাকাবাসী। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এলাকার বিশিষ্ট মুরব্বি ও বাজারের ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মখলিছুর রহমান।
তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমরা গোয়াইনঘাট উপজেলার পাঁচসেউতি বাজার পরিচালনা কমিটি সদস্যবৃন্দ। আমরা সবাই বাজারের পরিচালনা কমিটির সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দা হই। আমরা বিগত ১৯৭৯ সাল থেকে দোকান ঘর দিয়ে বাজারে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। বর্তমানে ওই বাজারের ভূমির মালিক ৪ পরগনার বাসিন্দারা। ১৯৭৯ সালে ৪ পরগনার লোকজনের সমন্বয়ে এই বাজারটির যাত্রা শুরু হয়। এলাকার লোকজন দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবসা ও দোকান কোটা ভাড়া প্রদানের মধ্যে দিয়ে ভোগ দখল ও তত্বাবধান করে আসছে। এদিকে এক ভূমি খেকোর দৃষ্টি পড়ে এই বাজারের উপর। সে ভূয়া উত্তরাধিকারী দাবি নিয়ে বাজারের ভূমি আত্মসাত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। পাঁচসেউতি বাজারের সাড়ে ১৬ শতক জমির উপর মালিকানা দাবি করে ৫নং আলীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে একটি জাল ভূয়া উত্তরাধিকারী সনদ তৈরি করে জৈন্তাপুর উপজেলার আগফৌদ গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে কাজিম উদ্দিন। পরবর্তীতে আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম এই সনদটি সম্পূর্ণরূপে ভুয়া। বর্ণিত এস.এ দাগ ও খতিয়ানের রেকর্ডকৃত ভুমির মালিক স্বত্ববান ও দখলকার ছিলেন কন্টাই বিবি। কিন্তু কন্টাই বিবি নিঃসন্তান। তপশীল- জেলা- সিলেট, থানা- গোয়াইনঘাট, মৌজা- পাঁচসেউতি বাজার, এস.এ.জে.এল নং- ২৯৩ স্থিত, এস.এ খতিয়ান নং-৩৪, এস.এ দাগ নং- ৬৫, পরিমাণ-০.৫১ একর।
তিনি আরও বলেন, পাঁচসেউতি বাজারে উন্নয়নের স্বার্থে সকল ব্যবসায়ীদের সম্মতিক্রমে উন্নয়ন কাজ শুরু করা হয়। এই উন্নয়ন কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায় জৈন্তাপুর উপজেলার আগফৌদ গ্রামের কাজিম উদ্দিন। সে নিজেকে বাজারের সাড়ে ১৬ শতক ভুমির মালিক দাবি করে। এমন কি বাজারে অশান্তি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে সিলেট জেলা পুলিশ সুপারের নিকট বাজার পরিচালনা কমিটি ও এলাকার লোকজনের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা সাজানো অভিযোগ দাখিল করে। পরে এই অভিযোগ দিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ করায়। মিথ্যা সংবাদ আমাদের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে সাজানো বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করে। এছাড়া ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর গোয়াইনঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করেন। পরে থানা পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করেন। কিন্তু সংবাদে উল্লেখ করা হয় গোয়াইনঘাট থানায় অভিযোগ দিলে রহস্যজনক কারণে তা আমলে নেয় নি থানা পুলিশ। এতে থানা পুলিশের ভাবমূর্তি কুন্ন করেছে মিথ্যা অভিযোগকারী আবুল ফয়সল। তার সাজানো সংবাদে কমিটির লোকজনকে ভুমি খেকো বলা হয়েছে। এখানে সবাই ব্যবসায়ী কেউ ভুমি খেকো নয়। সুতরাং আবুল ফয়ছলের অভিযোগটি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা বানোয়াট। এই সংবাদ প্রকাশে আমাদের কমিটির মানহানি করা হয়েছে। তাছাড়া বাজারের কোন ব্যবসায়ী বা পরিচালনা কমিটির কেউ তাকে কোন ধরনের হুমকি প্রদান করেননি। অথচ সে অভিযোগ ও সংবাদ হুমকি প্রদানের কথা উল্লেখ করেছে। আমরা এই সাজানো মিথ্যা সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অপরদিকে
আগফৌদ গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে কাজিম উদ্দিন একজন ভুয়া উত্তরাধিকারী। এস.এ দাগ ও খতিয়ানের রেকর্ডকৃত ভুমির মালিক স্বত্ববান ও দখলকার ছিলেন কন্টাই বিবি। তিনি নিঃসন্তান থাকায় ৫নং আলীরগাঁও ইউনিয়ন থেকে কাজিম উদ্দিন ভুয়া উত্তরাধিকারী সনদ তৈরী করে সাড়ে ১৬ শতক ভুমি তার নিজ নামে রেকর্ডভুক্ত করে নেয়। অথচ মৃত কন্টাই বিবি জৈন্তাপুর উপজেলার আগফৌদ গ্রামের বাসিন্দা মৃত মানিক মিয়ার মেয়ে এবং পাঁচসেউতি নিবাসী বাদুল্লার স্ত্রী।
তাহলে কন্টাই বিবি ছিলেন একজন নিঃসন্তান মহিলা। তার কোন সন্তান নেই। ইয়াকুব আলী কিভাবে কন্টাই বিবির সন্তান হলেন। এই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রশাসনের নিকট আমাদের জোর দাবি। কিভাবে ভুয়া সনদ তৈরী করে বাজারের জমি রেকর্ড করলো কাজিম উদ্দিন।
আমাদের বিরুদ্ধে এই ভূয়া উত্তরাধিকারী দাবিদার কাজিম উদ্দিন যে, অভিযোগ ও সংবাদ প্রকাশ করেছে। তা কাজিম উদ্দিন কিভাবে কন্টাই বিবির চোখে ধুলা দিল। আমরা এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আকুল আবেদন করছি সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে ভুয়া উত্তরাধিকারী দাবিদার কাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাজার পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি বিলাল উদ্দিন, বিশিষ্ট মুরব্বি হারিছ আহমদ, হাজি হারুনুর রশিদ, নুরুল হক প্রমুখ।