রাকিব হাসান, মাদারীপুর।
সারা বিশ্বের মতো দেশেও করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে মানুষ ঘরের বাইরে যাচ্ছে; কিন্তু দুর্ভাগ্য বিষয় অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। সাধারন মানুষের মধ্যে নেই কোন ভীতি, উদ্বেগ ও সচেতনতা। গনপরিবহন, হাট-বাজার, বিপনী বিতান, বিনোদন স্পট, লঞ্চ ও বাসে কোথাও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। সামনে শীতকাল আসন্ন। শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারনে সর্দি-কাশি, হাপানিসহ ঠান্ডাজনিত রোগ-বালাই বাড়ে, আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য কিছু ভাইরাস জ্বর হয়ে থাকে। মাস্ক ব্যবহার না করা, স্বাস্থ্যবিধি না মানা, সামাজিক দুরত্ব রক্ষা এ তিনটি বিষয় নিশ্চিত করা না গেলে এই শীত মৌসুমে করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ধাপে সংক্রমনের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে করোনা ভাইরাসে আতঙ্ক নয়; দরকার সচেতনতা ও সতর্কতা এই বিষয়কে প্রতিপাদ্য করে মাদারীপুর জেলা পুলিশ-মাস্ক পরিধান, স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক পরার জন্য নিয়মিত মাইকিং ও প্রচার-প্রচারনা করে যাচ্ছে। যারা মাস্ক পরছেন না তাদেরকেই দিয়ে মাস্ক পরার বিষয়ে সাধারন জনগনকে আহ্বান ও সচেতন বানী শুনানো হচ্ছে।
নিয়মিত চেকপোষ্টের মাধ্যমে জেলা শহরে এবং থানা এলাকায় গুরুত্বপূর্ন মোড় বা স্থান, হাটবাজার, বাস ও লঞ্চঘাটে এবং জনসমাগমস্থলে মাস্ক বিতরনের মাধ্যমে জনগনকে মাস্ক পরতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সচেতনতার পাশাপাশি সাধারন মানুষকে বিনামূল্যে মাস্ক পরিয়ে; মাস্ক পরার বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।
ইতোপূর্বে দেশে প্রথম ৮ই মার্চ ২০২০ শিবচরকে লকডাউন করা হয়; তখন মাদারীপুর জেলা পুলিশ লকডাউন কর্মসূচীতে পেশাদারিত্ব ও মানবিকতার সাথে কাজ করে। দেশের প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির শনাক্ত হয় মাদারীপুরে। করোনা ভাইরাস সংক্রমনের হটস্পটও বলা হতো মাদারীপুরকে। জেলায় আজ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ১৫৪০ জনের মধ্যে সদর থানা এলাকায় ৬৭৫জন, শিবচর থানা এলাকায় ২৫৫জন, কালকিনি থানা এলাকায় ১৯২, ডাসার থানা এলাকায় ৪০জন এবং রাজৈর থানা এলাকায় ৩৭৮জন। এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ১৮জন। পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে ৫৯জন। সবাই সুস্থ হয়ে কর্মস্থলে ফিরেছেন। করোনা সংক্রমন প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রথম থেকেই সাহস ও উদ্যমের সাথে কাজ করে যাচ্ছে মাদারীপুর জেলা পুলিশ। করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে গত মার্চ মাসের শুরু হতেই মাদারীপুর জেলা পুলিশ জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লিফলেট ও হ্যান্ডবিল বিতরন, নিয়মিত মাইকিং, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রচারাভিযান চালিয়ে বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য উৎসাহিত করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মাঝে মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে। এছাড়াও খুদেবার্তার মাধ্যমে জেলা পুলিশের নির্দিষ্ট নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে প্রয়োজন অনুসারে মানবিক সহায়তা প্রত্যাশিদের ঘরে পৌছে দেয়া হয়েছে রাতের অন্ধকারে। করোনার ২য় ঢেউ মোকাবেলায় প্রচার-প্রচারনা, সচেতনতা ও মানবিক সহায়তা এখনও অব্যাহত আছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাস্ক পরলে শতকরা ৮০ ভাগ করোনায় নিরাপদ থাকা যায়। ইতোমধ্যে সরকার নো মাস্ক নো সার্ভিস ঘোষনা করেছে। পুলিশ সুপার কার্যালয়, থানা-ফাড়ী ও বিভিন্ন ইউনিটে এই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরন করা হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া আগত সেবা প্রত্যাসীদেরও মাস্ক সরবরাহ করা হচ্ছে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে সাধারন জনগনকে মানাতে ও অনুসরন করতে জেলা পুলিশের প্রত্যেক সদস্য নিরলসভাবে সার্বক্ষনিক কাজ করে যাচ্ছে।