আহসান হাবীব লায়েকঃ সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার ৭নং বারঠাকুরী ইউনিয়নের কজাপুর গ্রামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে একটি বসতঘর সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফলে অসহায় এ পরিবার মাথা গোঁজার আশ্রয় হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৭/৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। অগ্নিকাণ্ডে বসতঘর সহ ঘরে থাকা নগদ ৮০ হাজার টাকা, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, ফার্ণিচার সামগ্রী, ব্যবহৃত লেপ, তোশক. বালিশ, কাঁপড় চোপড়, দলীল দস্তাবেজ, গৃহপালিত পশু পাখি সহ প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকার জিনিসপত্র পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়। এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্তদের ভাষ্য, মঙ্গলবার মধ্যরাতে কজাপুর গ্রামের নিরীহ গরীব আসহায় আব্দুল খালিক বসতঘরের এক সাথে আগুন লেগে যায়। স্থানীয়রা ধারণা করছেন, কোন স্বার্থ কিংবা শত্রুতার জের ধরে কেউ পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিতে পারে। আগুন লাগারপর স্থানীয়রা জকিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। তবে গ্রামের অপ্রশস্ত রাস্তা দিয়ে ফায়ার সার্ভিস গাড়ি নিয়ে পৌঁছতে পারে না। এ সময় স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো প্রতিবেশীদের দেওয়া কাপড়চোপড় পরে আছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরিবারটি একেবারে অসহায়। পুড়ে যাওয়া বয়োবৃদ্ধ আব্দুল খালিকের ৭ জন মেয়ে সন্তান। কোন ছেলে সন্তান নাই। স্ত্রী মারা গেছেন ৯/১০ বছর আগেই। সেই স্ত্রী পরিবারের খরচ থেকে টাকা সঞ্চয় করে অনেক কষ্টে ঘরটি তৈরি করেছিলেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী তিনি একাই। সারাজীবন যা সঞ্চয় করেছিলেন তা দিয়েই শেষ জীবনে নিজের মাথা গুজার জন্য মুটামুটি আধাপাকা বসতঘরটি তিনি তৈরী করে ছিলেন। জীবনের সেই দীর্ঘ দিনের স্বপ্নের বসতঘরটি পুড়ে যাওয়ায় এখন তিনি খোলা আকাশের নীচে বসতে হবে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুল খালিক বলেন, সারা জীবন যে সহায়-সম্বল আমি সঞ্চয় করেছি সর্বনাশা আগুন সব কেড়ে নিয়েছে। এখন আমি ও আমার পরিবার কোথায় যাব? নতুন করে ঘর তৈরি করার মতো কোনো সম্বল আমার অবশিষ্ট নেই। ক্ষতিগ্রস্ত রাহেনা বেগম বলেন, ‘ বয়োবৃদ্ধ স্বামী ছাড়া আমাদের পরিবারে উপার্জনের মতো লোক কেউ নেই। কোনোভাবে ভাত জোগাড় করে খাই এবং মেয়েদের দেখা শুনা করি। ঘরসহ সব মালামাল শুধু পুড়ে নাই, মেয়ের মহরের ৮০ হাজার টাকা সহ ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি পর্যন্ত পুড়ে গেছে। এখন এক পোশাকে খোলা আকাশের নীচে আছি। প্রতিবেশীদের দেওয়া কাপড় চোপড় ও খাওয়া দাওয়া দিয়ে বেঁচে আছি। এমন নিস্ব হওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো ছিল। ৭নং বারঠাকুরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মহসিন মর্তুজা চৌধুরী টিপু জানান, আমি অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিসকে বিষয়টি অবহিত করেছি। অগ্নিকাণ্ডে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর সহযোগিতার জন্য আবেদন করতে বলেছি।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমী আক্তার বলেন, আমি অগ্নিকাণ্ডের কোন খবর এখনো পাইনি। স্থানীয় চেয়ারম্যান এ বিষয়ে আমাকে অবগত করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।