মাইদুল ইসলাম,জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা: সঠিক তদারকি ও জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা না থাকায় গাইবান্ধা জেলা পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে চলছে তেলেসমাতি কারবার। যেন দেখার কেউ নেই।
জানা গেছে, ২০১৭-২০১৮ হতে ২০২১-২০২২ইং অর্থবছর গুলোতে গাইবান্ধা জেলা পরিষদের অর্থায়নে জেলার ৭টি উপজেলার বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, শ্মশানঘাটসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্প বরাদ্দ ছাড় দেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জেলার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের চন্দিয়া বাজার সংলগ্ন শহীদ মিনার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লক্ষ টাকা। গত ০৭-০৫-২০২২ ইং তারিখে প্রকল্প স্থান পরিদর্শন কালে চন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সবুজ মিয়া অভিযোগে জানান, শহীদ মিনারটি চন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি খন্দকার জুয়েল সদস্য পদে রাখার জন্য ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপিসহ কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেন। এরপর আজঅবধি বিদ্যালয় মাঠে কিংবা বাজারসংলগ্ন কোন জায়গায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। অথচ বরাদ্দের প্রথম কিস্তির টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এটি নির্মাণ করা হবে কি না এমন নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না। মাহবুবর রহমান নামের এক ব্যক্তি জানান, তাকে কমিটির সাধারণ স¤পাদক পদে রাখার কথা বলে ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপিসহ কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেয়া হয়। প্রকল্পের কাজ শুরু না করা হলেও তার স্বাক্ষর ছাড়া ব্যাংক থেকে কিভাবে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে তিনি তা জানেন না। এমনকি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির অন্যান্য সদস্যরাও এবিষয়ে অবগত নয়। ২০১৭-২০১৮ইং অর্থ বছরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের দারুস সালাম পূর্ব হাতিয়া জামে মসজিদের নামে ১ লক্ষ টাকার একটি বরাদ্দ দেয়া হয়। গত ০৮-০৫-২০২২ইং তারিখে সরেজমিনে প্রকল্পস্থান পরিদর্শন কালে জামে মসজিদের সাবেক সভাপতি এনামুল হক জানান, ২০১৭ সালের দিকে এ মসজিদের সাহায্যের জন্য আবেদন করেছিলাম। আবেদনটি অফিস থেকে হারিয়ে গেলে পরবর্তীতে আব্দুল মান্নান চৌধুরী আবেদন করেছিলেন। আব্দুল মান্নান চৌধুরী মারা গেছেন। এরপর মসজিদের নামে কোন বরাদ্দ হয়েছে কিনা জানিনা। কমিটির কোষাধক্ষ্য মোজাম্মেল হক সরকার জানান, এ বরাদ্দের জন্য অনেক হয়রানি হয়েছি। বিধায়য় বরাদ্দের আশা ছেড়ে দিয়েছি। যদি কোন বরাদ্দ হয়ে থাকে জেলা পরিষদ এপর্যন্ত আমাদেক অবগত করা হয়নি। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের দক্ষিণ দুর্গাপুর গ্রামের কবিরাজের বাড়ির পাশে জামে মসজিদের নামে ১ লক্ষ টাকা দরপত্রের মাধ্যমে প্রকল্প দেয়া হয়।
প্রকল্পটি পরিদর্শন কালে মসজিদ কমিটির সভাপতির দেখা না পাওয়া গেলেও কথা হয় মসজিদ সংলগ্ন শরিফুল ইসলাম সাজুর সাথে। তিনি জানান, কত টাকার বরাদ্দ এবং কত টাকার কাজ করা হয়েছে জানিনা। এ সময় উপস্থিত লোকজন জানান, এ মসজিদের নামে কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে তা তারা জানেন না। তবে শরিফুল ইসলাম সাজু সামান্য টাকার কিছু কাজ করেছেন। পরিদর্শনে দেখা গেছে, প্রকল্প স্থানে প্রকল্পের নাম, বরাদ্দের পরিমান, অর্থবছর,অর্থায়নে বা বাস্তবায়নের বিবরণ সম্বলিত সাইনবোর্ড থাকার নিয়ম থাকলেও তা পাওয়া যায়নি। এতে করে বরাদ্দের পরিমাণ গোপন রাখা হয়েছে মর্মে অনেকেরই অভিযোগ। এটি অর্থ আতœসাতের অপকৌশল মাত্র। সচেতন মহলের মন্তব্য, অফিস থেকে প্রকল্প ছাড় দেয়া হলেও মাঠ পর্যায়ে নেই সঠিক তদারকি ও জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা। ফলে অনেক প্রকল্পের কাজ ভেস্তে যাচ্ছে। প্রকল্পের নামমাত্র কাজ দেখিয়ে লুটপাটের ঘটনাও ঘটছে। যা মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে অনিয়মের অনেক ভয়াবহ চিত্র। এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ফুলছড়ির চন্দিয়া বাজার সংলগ্ন শহীদ মিনার নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম কিস্তির ১ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে। কাজ সম্পন্ন না করা হলে বাকি টাকা ছাড় দেয়া হবে না। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের দারুস সালাম পূর্ব হাতিয়া জামে মসজিদের প্রকল্প বিষয়ে তিনি জানেন না। তবে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের দক্ষিণ দুর্গাপুর গ্রামের কবিরাজের বাড়ি সংলগ্ন জামে মসজিদ প্রকল্পে অনিয়ম হয়ে থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে।