পর্ব_১
গ্রামে আমার জন্ম,,,,,গ্রাম আমি ভালোবাসি।
মা ,বাবা ,দিদি , আর ঠাকুমা কে নিয়ে আমাদের ছোটো সংসার ।
গরীব হলেও সারাজীবন মাথা উচু করেই বেঁচএছি।
আমার দিদি কানে কম শুনত কিন্তু খুব ভালো ছিলো,,,বাবা মা এয়র সঙ্গে মাঠে কাজে আমি আর দিদি ও হাত লাগাতাম,।
অনেক গুলো বছর পেরিয়ে গেলো।আমি ও বুঝতে পারছি যে আমি ও কানে কম শুনি।তখন কুচবিহার এ ডক্টর অমল বসাক এর কাছে গেলাম । উনি কিছু টেস্ট করতে বললেন।টেস্ট করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে ডক্টর এর কাছে এলাম।
ডক্টর_ সরি, আমার কিছু করার নাই, কানের নার্ভ দুর্বল হয়ে গেছে।
আমার চোখএর জল আর বাঁধ মানছে না।গড়গড়িয়ে বয়ে চলছে আমার চোখের জল,যতই চেষ্টা করি চোখের জল কে আটকে রাখতে,ততই দ্রুত গতিতে বোয়ে চলে।
ডক্টর কোনো ওষুধ দেননি , শুধু লিখে দিয়েছেন মেশিন ইউজ করতে,কিন্তু মেশিনের খুব দাম,তাই আর ইউজ করা হলোনা।
এভাবেই দিন কেটে যেতে লাগলো,।
সর্বদা হাস্যময়ী একটি মেয়ে,গ্রামে তার জন্ম যে,জীবনের চোদ্দটি বছর আমি খুব হাসি খুশি তে কাটিয়েছে ।
আমার বন্ধু বান্ধবীদের সংখ্যা ছিল আকশের তারার মতোই অগনিত, কিন্তু আজ আমি একা, বড়ো একা ।
আমাকে সব বন্ধু বান্ধবীরা ভুলে গেছে , এমনকি কথাও বলে না
এমনকি তারা আমায় বলে আনকালর্চাট(uncultured) কারন আমি অকারনে সাজ গুজা পছন্দ করিনা
আবার কেউ কেউ বলে গেয়ো ,কারন আমি বাহাদুরী স্টাইল জানি না,কেউ আবার বলে কাবাব মে হাড্ডি,কারন কেউ আমাকে সহ্য করতে পারেনা,
তবুও আমি হাসি মুখে সব মেনে নেয়।, তবে কখনো সহ্যের সীমা ছাড়িরে যায় ,যদি আমি প্রতিবাদ করি ,তবে তার পরিবর্তে আসে হুমকি,।
এমনকি আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী , সেও আজ তাকে এড়িয়ে চলে.
কেউ আবার বলে” তোমার কোনো প্রির বান্ধবী নেই এটা তোমার অক্ষমতা…কারন তুমি বান্ধবী হওয়ার যোগ্যই নয়” এসব শুনে চোখে জল আসে ,কিন্তু তবুও হেসে বলি একদম ঠিক বলেছো…
ক্লাসে একটি প্রতিভান মেয়ে ছিল কিন্তু সে তার প্রতিভা প্রকাশিত করার সুয়োগ পাচ্ছিল না, তাকে এই সুযোগ পাইয়ে দিলম তাকেই সে মেয়ে টি বলে”আমি ব্যস্ত পূজা,আমাকে ডিস্টাব করো না”
এমনকি এক দিন এক গুরু স্থানীয় একজন আমাকে বলে ছিল” মিশরীর মমি” কারন বাকিদের মতো আমি গুরু স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে ঠাট্টা করা পচ্ছন্দ করতাম না
আমি আজও জানি না কি আমর দোষ?
পর্ব _২
কষ্টা টা কেউ বুঝবে না ,,,,কারন ব্যাস্ত জীবনে মানুষ নিজের পরিচিতি বাড়াতেই ব্যাস্ত, উপকারির উপকার কেউ আজ কাল আর মনে রাখে না।
লোকের বিদ্রুপ সইতে আর পারছিলাম না।ঠাকুমা পাড়ার এক দিদার কাছ থেকে দূধ আনে,একদিন ঠাকুমা অসুস্থ থাকায় আমি গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি দাদু শুয়ে এসে আর দিদা দাদুর পায়ে তেল মালিশ করছে।
যেতেই দিদা টা কিছু বললো, আমি শুনি নি তাই বোসি দিদা কিছু বলছো? দিদা_ তুই ও নাকি কানে শুনিস না?
আমি _ হা দিদা
দিদা_ কি দোষে যে তোদের এই অবস্থা,বগবানেই জানে।
আমি_দুধ টা দাও দিদা আমর তারা আছে।
দিদা_ টা হে রে কানে যে শুনিস না, বিয়ের পর স্বামীর সাথ এ গলপো করবি কি ভাবে?
এইসব কথা শুনে মাথায় আগুন জ্বললো।
আমি_ দিদা তুমি তোমার স্বামী এর সাথএ গলপো করো ,আমর দরকার নাই, ।
বাড়ি ফিরে এলাম।
2018 সাল ,আমি মাধ্যমিক দিলাম,আমি ক্লাস ফাইভ থেকে টেন,সবসয়ই ক্লাসে ২য় ,3 য় হতাম,সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকা দের চোখের মণি ছিলাম,কিন্তু কিছু শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধক্তার কারণে মাধ্যমিক এর রেজাল্ট ভালো করতে পারিনি,,,455 নম্বর পেয়ে 1 স্ট ডিভিশন ছিলাম,কিন্তু স্কুল এর ম্যাম , স্যার সবাই আর একটু ভালো রেজাল্ট আসা করেছিলো, নিজের অজাতে স্যার দের সপ্ন মা বাবার সপ্ন পূরণ করতে পারিনি বলে আজ কাল তাদের সামনে গিয়ে মাথা তুলে কথা বলতে পারিনা।বর্তমানে ক্লাস 12 এ , শিক্ষক শিক্ষিকা দের থেকে দূরেই থাকতাম,স্কুল এই বেশি যেতাম ন কানে কম শুনি বলে,একদিন যে শিক্ষক দের চোখের মণি ছিলাম,আজ তারাও আমায় ভুলে গেছে।এটাই তো নীয়ম,নতুনের আগমনের পুরাতনের বিদায়।আজও নিরবে কান্না করি আর ভাবতে থাকি এ কেমন বিধির বিধান?
২০২০ সাল,আমি উচমাধমিক পরীক্ষা দিয়েছি,ছোটো থেকে বরো হলাম কিন্তু কখনো টিউশন ছিলনা,একাই সব সমাধান করতাম।উচোমাধমিক এ আমার পাপ্ত নম্বর 434 ,কিন্তু আমার ঠোঁটে হাসির বদলে চোখে জল,কারন বর্তমানে নাকি 95% নম্বর এর ও কোনো দাম নেই, আর আমি তো মাত্র 86% পেয়েছি,,।আঘাত জন্তনা,লাঞ্ছনা, বঞ্চনা আর অপমানে আমি যেনো দিন দিন কেমন বদলে যাচ্ছি ,বড্ড মেজাজি হয়ে গেছি
যখন আমি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি তখন সমাজ, বন্ধু,বান্ধবী যেনো মনে হচ্ছে সকলে আমার পা টাই ভেঙে দিতে চাইছে,
আমার মনে হতে থাকে আমি যেনো পৃথিবির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিনা।
পর্ব_৩
আমি ভেবেছিলাম, আমার জীবনের সব সপ্ন পূরণ করবো,কিন্তু তা আর হলো না।আমি নিজেই নিজের কাছে বড্ড ছোটো হয় এ গেছি।
উচমাধমিক পাস করার পর বিভিন্ন ধরনের চাকরির কোর্স করে নিজে পায়ে দারাবো ভেবেছিলাম,কিন্তু টাকার অভাবে তা আর হলনা।
আমর মনে হতে লাগলো যেনো আমর পায়ের নিজে মাটি নেই , আমি যেনো মাঝ সমুদ্রে পরে গেছি। নিজেকে নিজেই শেষ করে দিতে ইচ্ছা হতো, কিন্তু শাস্ত্রে পরে ছিলাম, আত্যহত্যা মহাপাপ। তাই আর বিধির বিধান লঙ্গণ করতে পারিনি ।প্রভুর কাছে দিন রাত কেবলি মৃত্যু কামনা করে চলেছি।কিন্তু ভগবান হয়ত আমার কথা শুনতে পারেনি তাই আজও মরেও বেঁচে আছি।
শাস্ত্রে পরে ছিলাম পতিটি ব্যাক্তির জন্মের পিছনে কোনো না কোনো উদ্দেশ্য থাকে।
খুব জানতে ইচ্ছা হতো আমর জন্মের কি উদ্দেশ্য ? শুধুই কি কান্না করা? না খেয়ে না গুমিয়ে শরীরের অবস্থা শেষ।
বর্তমানে কলজে ইংলিশ নিয়ে পরছি। কিন্তু কোনো টিউশন নেই। খরজ এর কথা ভাবলেই দিশেহারা।
শুনে ছিলাম কস্ট করলে নাকি কেষ্ট মেলে,।কই কেষ্ট ত দূরের কথা সারাজীবন কস্ট করেও ত একদিন ও সুখের মুখ দেখতে পেলাম না । আমর বন্ধু বান্ধবীরা যারা আরামে আয়াসে বরো হয় এ টেনেটুনে উচ্মাধমিক পাস করেছে তারাও আজ আনন্দে হেসে খেলে বেড়াচ্ছে।
কিন্তু আমর চোখের জলের বাঁধ ভেঙে যায় তবুও কান্না থামেনা। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ভাবি এভাবে আর কত দিন বাঁচবো?
জীবন নামক যুদ্ধে যুদ্ধ করার অস্ত্র নেই নিরস্ত্র আমি মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করি,কিন্তু মৃত্যু আমায় মৃত্যু দণ্ড না দিয়ে আজীবন দুঃখের কারাবাসে বন্দী করলো।
আকাশ ছোয়া সপ্ন গুলো বন্দী যখন সোনার খাঁচায় তখনো মন সপ্ন দেখে কেবলি বেঁচে থাকার আশায়। এ কেমন বিধির বিধান?