আগামী ১৭ মার্চ শুরু হচ্ছে না ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এবার মেলা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ সংক্রান্ত আবেদনের অনুমোদন দেননি প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) বিষয়টি নিশ্চিত করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রধানমন্ত্রী মেলা আয়োজনের জন্য পাঠানো প্রস্তাবে অনুমোদন দেননি। তাই মেলা হচ্ছে না। মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সে রকমই জানানো হয়েছে।
কী কারণে প্রস্তাব ফেরত দেওয়া হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, কী কারণে ফেরত দেওয়া হয়েছে সেটা নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, করোনা মহামারির জন্য হতে পারে।
তাহলে কী এবার আর বাণিজ্যমেলা হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু অনুমতি দেননি, তাই আপাতত মেলা হচ্ছে না। পরবর্তিকালে মেলা হবে কি-না সেটা এখনি বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা মেলার কার্যক্রম শুরু করেছিলাম, যাতে রমজানের আগে মেলাটা করতে পারি। এখন সেটা সম্ভব হচ্ছে না। এবার হবে কি-না সেটা নির্ভর করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমতির ওপর। তারা যদি মনে করেন ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য বছরের অন্য যেকোনো সময় এ মেলার আয়োজন করা দরকার, তাহলে হতে পারে।
ইপিবি সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর ইংরেজি বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ০১ জানুয়ারি থেকে মেলা শুরু হয়। কিন্তু নভেম্বর থেকে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ আসায় এবারের মেলা মার্চে শুরুর প্রস্তাব এসেছে। সবকিছু বিবেচনা করে আগামী মার্চে পূর্বাচলে স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা অনলাইনে এবং শারীরিক উপস্থিতি উভয় পদ্ধতিতে আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ এগোতে থাকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ঠরা। সে অনুযায়ী সব প্রস্তুতিও এগিয়ে নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে সোমবার (১৮ জানুয়ারি) জাতীয় দৈনিকে মেলার প্যাভিলিয়ন/রেস্টুরেন্ট/স্টলের স্পেস বরাদ্দের জন্য দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তিও দেয় ইপিবি।
ইপিবি সূত্রে আরও জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে বসার কথা ছিল এই মেলা। ২০ একর (৮ দশমিক ১ হেক্টর) জমিতে ওই প্রদর্শনী সেন্টার করে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিএসসিইসি)। এটি বাংলাদেশ ও চীনের একটি যৌথ প্রকল্প। ৭৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের ৬২৫ কোটি টাকা অনুদান হিসাবে দিয়েছে চায়না এইড এবং সরকারি তহবিলের ১৭০ কোটি ৩১ লাখ টাকা নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়। পরে বাস্তবতার নিরিখে অতিরিক্ত ১৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ, নতুন স্থাপনা নির্মাণ, সেন্টারের পরিসর বৃদ্ধি, রক্ষণা-বেক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কারণে ১৭০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী চীনের নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার বুঝে পাওয়ার কথা ছিল। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরও চায়না প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবনা অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকতার জন্য এখনও সেটি বুঝে পায়নি সরকার। তবে ২০০৯ সালে নেওয়া এ উদ্যোগটি বাস্তবায়নে সময় গিয়ে দাঁড়ায় ১২ বছরে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ বছরে ধরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অস্থায়ী জায়গায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর ০১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী এ মেলা উদ্বোধন করেন। কিন্তু এবার করোনার পরিস্থিতির জন্য মেলা দুই মাস পিছিয়ে মার্চে উদ্বোধন প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
এদিকে গত বছর ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা- ২০২০ এ বৈরী পরিবেশ, সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ নানা প্রতিকূল অবস্থার কারণে বড় বড় ছুটির দিনগুলোতে বাণিজ্যমেলা বন্ধ ছিল। ফলে ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা কম হওয়ায় অনেকটা প্রাণহীন ছিল বাণিজ্য মেলা- ২০২০।