অনলাইনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি দেশের সব বিভাগীয় কার্যালয়, জেলা শিক্ষা অফিস, উপজেলা শিক্ষা অফিস, পিটিআই সুপারিন্টেনডেন্টদের কাছে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
চিঠিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে অনলাইন ক্লাস পরিচালনাসহ ১৩ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় গুগল মিট (Google Meet) ব্যবহার করে ক্লাস পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। আর অনলাইন ক্লাসের জন্য ডাটা সংগ্রহে প্রয়োজনীয় টাকা বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ড থেকে নির্বাহ করতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, অনলাইন ক্লাস মনিটরিং করতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, পিটিআই সুপারিন্টেনডেন্ট, পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর (কম্পিউটার সায়েন্স), উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও ইউআরসির ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়ে জেলা পর্যায়ে একটি কমিটি থাকবে। যারা ক্লাস্টার পর্যায়ে অনলাইন ক্লাস পরিচালনা কার্যক্রম বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবেন। বিভাগীয় উপ-পরিচালক তার বিভাগের সার্বিক দায়িত্বে থাকবেন।
আর প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা, মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তা ও পিটিআই ইনস্ট্রাক্টররা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন। ক্লাসের জন্য কন্টেন্ট ও পাঠ পরিকল্পনা সরবরাহ করা হবে। একই পাঠ পরিকল্পনা ব্যবহার করে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস একযোগে চলবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের গুগল মিট ব্যবহার করে ক্লাস করার বিষয়ে অরিয়েন্টেশন দেবেন শিক্ষকরা। সংসদ টিভি ও বেতারে প্রচারিত ক্লাসের সঙ্গে অনলাইনেও ক্লাস চলবে শিক্ষার্থীদের।
আদেশে অধিদফতর বলছে, গুগল মিট অনলাইন ক্লাসের প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কোনো ক্লাস্টারে কোনো শিক্ষক গুগল মিটের বিষয়ে না জেনে থাকলে সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষকদের এক দিনের অরিয়েন্টেশন দিতে হবে।
প্রতিটি ক্লাস্টারে একটি করে আইসিটি পুল গঠন করতে হবে। এতে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নেতৃত্বে ক্লাস্টারের অন্তর্গত বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা থাকবেন, যারা এরই মধ্যে গুগল মিটে কাজ করেছেন। আইসিটি পুলের সদস্যরা ক্লাস্টারের যত বেশি সংখ্যক সম্ভব শিক্ষকদেরকে একদিনের অরিয়েন্টেশন দেবেন। আইসিটি পুলের সদস্যরা এবং এরই মধ্যে ওরিয়েন্টেড শিক্ষকরা সব শিক্ষার্থী ও প্রয়োজনে তাদের অভিভাবকদেরকে (যাদের স্মার্ট ডিভাইস আছে) গুগল মিটে ক্লাসের বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন দেবেন।
বর্তমানে দেশের সব বিদ্যালয়ে (যেখানে ইন্টারনেট সুবিধা আছে) ডাটা সরবরাহের জন্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান নির্বাচন ও সংশ্লিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন ফোর জি ডাটা সরবরাহ নিশ্চিত করার কাজ চলছে। এটি চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তর্র্বতীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে অনলাইন পাঠদানকারী শিক্ষকরা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ড থেকে নীতিমালা অনুযায়ী ডাটা সংগ্রহ করবেন। পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর (কম্পিউটার সায়েন্স) তার জেলার ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবেন। ক্লাস্টারের আইসিটি পুল সদস্যরা প্রয়োজনীয় পরামর্শের জন্য তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করবেন।
অনলাইন ক্লাসের কন্টেন্টগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে সরবরাহ করা হবে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে দেয়া একই পাঠ পরিকল্পনা অনুসরণ করে সারাদেশে একযোগে অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
অনলাইন ক্লাসে শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে অধিদফতর আরও বলছে, প্রতিটি ক্লাস্টারের যেসব শিক্ষকের গুগল মিটের ওপর ওরিয়েন্টেশন দরকার সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাদের তালিকা করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও সুপারিন্টেনডেন্ট বরাবর পাঠাবেন। প্রতি দিন একটি করে ব্যাচের গুগল মিটের ওপর ওরিয়েন্টেশন কার্যক্রম চালানো হবে।
ইনস্ট্রাক্টর (কম্পিউটার সায়েন্স) এই অরিয়েন্টেশনের দায়িত্বে থাকবেন। অধিদফতর থেকে আইএমডি এবং মাঠপর্যায় থেকে ইনস্ট্রাক্টররা (কম্পিউটার সায়েন্স) এ বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করবেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টর ও সহকারী উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসারদের সঙ্গে নিয়ে এ কার্যক্রম সার্বিক বাস্তবায়ন ও তদারকি করবেন।
অধিদফতর আরও বলেছে, অনলাইন পাঠদান প্রাথমিকভাবে ক্লাস্টারভিত্তিক হবে। তবে একই ক্লাস্টারে যদি ১টি ক্লাসে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩০ জনের বেশি হয়, তখন শিক্ষার্থী সংখ্যা অনুযায়ী একাধিক ক্লাসের আয়োজন করা যাবে। অথবা অন্য ক্লাস্টারের সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে। জেলা পর্যায়ের কমিটি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।
অনলাইন ক্লাসের সময়সূচি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অধিদফতর জানিয়েছে, সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতার ও কমিউনিটি রেডিও’র মাধ্যমে চলমান ‘ঘরে বসে শিখি’ পাঠ সম্প্রচারের সময় বাদ দিয়ে অনলাইন পাঠদানের সময়সূচি নির্ধারণ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্যাচমেন্ট এলাকার সব শিক্ষার্থীদের শিক্ষকপ্রতি ভাগ করে নেবেন। শিক্ষকরা প্রতিজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে নিয়মিতভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে শিক্ষার্থী পাঠ অগ্রগতির খোঁজখবর নেবেন। সংশ্লিষ্ট অনলাইন পাঠদানকারী শিক্ষকের কাছ থেকে মূল্যায়ন প্রতিবেদন সংগ্রহ এবং আবশ্যিকভাবে রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে প্রধান শিক্ষকদের।