খুলনার দুঃখ ‘জলাবদ্ধ বিল ডাকাতিয়া’
বৃষ্টিতে আবারো জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে বিল ডাকাতিয়া ও পার্শ্ববর্তী এলাকা। সাম্প্রতিক সময়ে টানা বর্ষণে এসব এলাকার প্রায় ১ হাজার ৮০০ চিংড়ি ও মাছের ঘের পানিতে ভেসে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, বিল ডাকাতিয়ায় জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ডিসেম্বরে সালতা ও ভদ্রা নদী খননের উদ্যোগ নেয়া হয়। বর্ষা শুরুর আগেই এ কাজ বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু দরপত্র-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কাজ শুরু করা যায়নি।
জানা গেছে, খুলনা খানজাহান আলী, আড়ংঘাটা, ডুমুরিয়া, ফুলতলা এবং যশোরের কেশবপুর, মণিরামপুর ও অভয়নগরের প্রায় ৩০ একর এলাকা নিয়ে বিল ডাকাতিয়া গঠিত। গত শতকের ষাটের দশকে উপকূলীয় অঞ্চলজুড়ে ভূমি উদ্ধারের জন্য পোল্ডার তৈরির ফলে বিল এলাকায় পানি জমতে শুরু করে। এতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়ে বিলসংলগ্ন এলাকার মানুষ। কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এসব মানুষের জীবন-জীবিকা। এ অবস্থায় ১৯৯২-৯৩ সালে পাউবোর ইমার্জেন্সি অ্যাকশন প্ল্যানের আলোকে খুলনা-যশোর নিষ্কাশন পুনর্বাসন প্রকল্পের (কেজেডিআরপি) অংশ হিসেবে বিল ডাকাতিয়ায় জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় কৈয়া নদী ও বিল ডাকাতিয়ার মধ্যভাগ দিয়ে আড়ংঘাটার শলুয়া থেকে ফুলতলার জামিরা পর্যন্ত ৮০ ফুট চওড়া খাল খনন করা হয়। এতে বিল ডাকাতিয়ার পানি নিষ্কাশন শুরু হলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে স্থানীয়রা। কিন্তু কৈয়া নদী এবং খননকৃত খালটি দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিল এলাকায় নতুন করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে নিয়মিত বর্ষণে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে বিলসহ আশপাশের এলাকা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নেয়ার পর বিল এলাকায় মাছ চাষ ও ধানসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ শুরু হয়। নতুন করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় তা ব্যাহত হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও মত্স্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বিল ডাকাতিয়ার অধিকাংশ জমিই মাছ ও সবজি চাষের আওতায় এসেছে। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের। তবে সাম্প্রতিক সময়ে টানা বর্ষণে বিল এলাকা পানিতে তলিয়ে গিয়ে মাছ ও চিংড়ির ঘের ভেসে যায়। ঘেরের মালিকরা আপ্রাণ চেষ্টা করে মাছ আটকে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিল এলাকায় পানি নিষ্কাশনের জন্য দ্রুত খাল ও নদী খনন করা প্রয়োজন।
ফুলতলা উপজেলা জ্যেষ্ঠ মত্স্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ জানান, উপজেলায় মোট ৮ হাজার ১০০ চিংড়ি ও মাছের ঘের রয়েছে। সম্প্রতি টানা বর্ষণে প্রায় ১ হাজার ৮০০ চিংড়ি ও মাছের ঘের সম্পূর্ণ ভেসে গেছে। এতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আবারো প্রবল বৃষ্টি হলে সব ঘেরই ভেসে যাবে।